Friday, April 11, 2025

২৬ না ২৭? আমেরিকার শুল্ক বিভ্রান্তি, কিন্তু ভারতের শ্বাস নেওয়ার সুযোগ কোথায়?

Share

আমেরিকার শুল্ক বিভ্রান্তি!

শেষমেশ আমেরিকা তাদের ভুল স্বীকার করেই নিল। কিন্তু তাতে ভারতের কপালে স্বস্তি জুটল না একটুও। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, ভারত থেকে আমদানিকৃত কিছু পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। যদিও সরকারি এক্সিকিউটিভ অর্ডার-এ সেই হার লেখা হয়েছিল ২৭ শতাংশ। এই সামান্য এক শতাংশ বিভ্রাট নিয়ে তৈরি হয় জল্পনা। অবশেষে শুক্রবার স্পষ্ট হয়ে গেল—সঠিক হার ২৬ শতাংশই।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এক শতাংশ কমানো কি কোনও বাস্তব স্বস্তি দিতে পারল ভারতকে?


শুল্ক বিভ্রাটের মূলে কী?

আমেরিকা একটি দেশের নাম ধরে ধরে একটি শুল্ক তালিকা তৈরি করেছে, যেখানে ভারতও রয়েছে। সেই তালিকায় লেখা ছিল ২৬ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে ভারতীয় পণ্যের উপর। কিন্তু পরে দেখা যায়, অফিসিয়াল ঘোষণায় তা ২৭ শতাংশ হয়ে গেছে। যেহেতু এটা সরাসরি আমদানি-রফতানির উপর প্রভাব ফেলে, তাই বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় উভয় দেশে। শেষমেশ মার্কিন প্রশাসন বলেছে, ৯ এপ্রিল থেকে ২৬ শতাংশ শুল্কই কার্যকর হবে।

কিন্তু শুধু এই শুল্ক নয়, আমেরিকার নিজের ‘অতিরিক্ত শুল্ক’ নিয়ম অনুযায়ী, আগেই থাকা শুল্কের উপরই আবার এই নতুন হার যোগ হবে। ফলে চূড়ান্ত খরচ অনেকটাই বাড়বে আমদানিকারীদের।


ভারতের ভিতরে চড়ছে রাজনীতির পারদ

এই ঘটনার পর ভারতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের নানা ইস্যুতে ব্যস্ত থাকলেও আমেরিকার এই নতুন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে কোনও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না। শুক্রবার কংগ্রেসের একদল সাংসদ সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি—“সরকার কেন নিশ্চুপ?”

লোকসভায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “এই শুল্ক ভারতের কৃষি, অটোমোবাইল এবং অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রগুলিকে তীব্রভাবে আঘাত করবে। এতবড় অর্থনৈতিক বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরব—এটা কি গ্রহণযোগ্য?”


ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কোন কোন ক্ষেত্র?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন শুল্ক সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে—

  • কৃষিপণ্য রফতানি: ভারত থেকে আমেরিকায় নানা ধরনের কৃষিপণ্য যায়। অতিরিক্ত শুল্ক বসলে তা আর প্রতিযোগিতামূলক থাকবে না।
  • অটোমোবাইল খাত: যেসব গাড়ির যন্ত্রাংশ ভারত থেকে আমদানি হয়, তা আমেরিকায় দামি হয়ে পড়বে। রফতানি কমবে।
  • কাঠ ও বস্ত্র শিল্প: এই দুই ক্ষেত্রেও ভারত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।

সামনে কী পথ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে কূটনৈতিক স্তরে জোরালো আলোচনায় নামা দরকার। আপাতত শুধু এক শতাংশ কমিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বরং দীর্ঘমেয়াদে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য নীতিতে স্বচ্ছতা এবং ভারসাম্য প্রয়োজন।

যেখানে বিশ্বের বাণিজ্য যুদ্ধ দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, সেখানে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে নরমাল রাখার জন্য চাই দূরদর্শী নেতৃত্ব—যেটা বিরোধীদের মতে, এই মুহূর্তে অনুপস্থিত। এখন দেখার, মোদী সরকার এই সংকট সামাল দিতে কতটা উদ্যোগী হয়, নাকি এই নীরবতাই ভবিষ্যতের বড় অর্থনৈতিক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!

Read more

Local News