Sunday, November 30, 2025

“২০০ টাকায় ঘর ছেড়ে, ওয়েটারের চাকরি থেকে সিনেমার পর্দা” — সংগ্রাম থেকে তারকাখ্যাতি, হর্ষবর্ধন রাণের অবিশ্বাস্য যাত্রা

Share

২০০ টাকায় ঘর ছেড়ে, ওয়েটারের চাকরি থেকে সিনেমার পর্দা!

জীবনে সাফল্যের রাস্তা কখনওই মসৃণ হয় না। বিশেষত অভিনয়ের মতো প্রতিযোগিতামূলক জগতে, যেখানে স্বপ্নের দাম দিতে হয় ঘাম, পরিশ্রম আর ত্যাগ দিয়ে। এমনই এক অনুপ্রেরণামূলক গল্প হর্ষবর্ধন রাণের — এক কিশোর, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০০ টাকা হাতে নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন, আর আজ তিনি দক্ষিণ ভারত থেকে বলিউড পর্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা।


চিকিৎসক বাবার ঘর ছেড়ে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন

অন্ধ্রপ্রদেশের রাজমহেন্দ্রভমে জন্ম হর্ষবর্ধনের। তাঁর বাবা বিবেক রাণে, একজন চিকিৎসক; মা তেলুগু পরিবারের মেয়ে। ছোট থেকেই তিনি অভিনয়ের প্রতি টান অনুভব করতেন, কিন্তু পরিবার চেয়েছিল তিনি বাবার মতো চিকিৎসক হোন।
স্বপ্নের পথে বাধা আসতেই একদিন সিদ্ধান্ত নেন — “আমি নিজের মতো করে বাঁচব।”
মাত্র ১৬ বছর বয়সে, পকেটে ছিল মাত্র ২০০ টাকা, সেই নিয়েই বেরিয়ে পড়েন নিজের ভাগ্য খুঁজতে।


ওয়েটার থেকে টেলিফোন বুথ কর্মচারী— কঠিন দিনগুলির গল্প

বাড়ি ছাড়ার পর তিনি পৌঁছোন নয়াদিল্লি। অভিনয় শেখার কোনও সুযোগ তখনো দূরের স্বপ্ন। দিন কাটানোর জন্য শুরু করেন ছোট ছোট কাজ।
এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছেন—

“প্রথমে আমি একটি হোস্টেলে ওয়েটারের কাজ পেতাম, দিনে ১০ টাকা। পরে একটি ক্যাফেতে কাজ করি, সেখানে ২০ টাকা করে মজুরি পেতাম।”

পরিষ্কার জল, সুলভ শৌচালয়— এগুলির জন্যও প্রতিদিন সংগ্রাম করতে হতো। এমনকি একসময় অন্যের ব্যবহৃত সাবান দিয়ে স্নান করতেন তিনি। কিন্তু এই কঠিন জীবনই তাঁকে গড়ে তোলে।
তিনি বলেন—

“প্রথম অভিনয়ের পারিশ্রমিক হাতে পাওয়ার পর আমি নিজের জন্য প্রথমবার একটা ভালো সুগন্ধি কিনেছিলাম। তখনই মনে হয়েছিল, এই গন্ধ আমার লড়াইয়ের জয়ের প্রতীক।”


মুম্বইয়ে প্রথম সুযোগ— ‘লেফট রাইট লেফট’

অবশেষে দিল্লির পর হর্ষবর্ধন পাড়ি দেন মুম্বই, সিনেমার রাজধানীতে। সেখানে এসে ভাগ্য তাঁর দিকে হাসল।
২৪ বছর বয়সে জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ় ‘Left Right Left’-এ প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। আট বছরের লড়াইয়ের পর সেটাই ছিল তাঁর জীবনের প্রথম জয়।

দু’বছর টেলিভিশনে কাজ করার পর ২০১০ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম তেলুগু ছবি ‘থাকিতা থাকিতা’। এরপর আসে ‘না ইশ্তাম’, যেখানে রানা দগ্গুবাতি ও জেনেলিয়া দেশমুখের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। তেলুগু দর্শকের কাছে ধীরে ধীরে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন হর্ষবর্ধন।


বলিউডে আগমন ও ভাগ্য ফেরানো পুনর্মুক্তি

২০১৬ সালে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন হর্ষবর্ধন, পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাওরা হোসেন-এর বিপরীতে ‘সনম তেরি কসম’ ছবিতে।
প্রথমে বক্স অফিসে তেমন সফল না হলেও ছবিটি পরবর্তীতে পুনর্মুক্তি পেলে ৫৩ কোটি টাকা আয় করে।
এই সাফল্য হর্ষবর্ধনের জীবন বদলে দেয়। দর্শক তাঁকে নতুন চোখে দেখতে শুরু করে। এরপর তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘এক দিওয়ানি কি দিওয়ানিয়াত’ বক্স অফিসে ১০০ কোটিরও বেশি ব্যবসা করেছে।


তারকার বাইরেও একজন মানবিক মানুষ

অভিনয়ের বাইরে, হর্ষবর্ধন সমাজসেবামূলক কাজেও সক্রিয়।
কোভিড মহামারির সময় অভাবীদের জন্য অক্সিজেন কনসেনট্রেটর কেনার উদ্দেশ্যে নিজের মোটরবাইক বিক্রি করেছিলেন তিনি।
এছাড়াও তাঁর একটি দাতব্য সংস্থা রয়েছে, যেখানে তিনি নিজের ছবিতে ব্যবহৃত জামাকাপড় বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দান করেন।

২০১৫ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।


শেষ কথা

হর্ষবর্ধন রাণের গল্প প্রমাণ করে—
স্বপ্ন পূরণের জন্য কেবল টাকা নয়, লাগে ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য ও অধ্যবসায়।
ওয়েটারের কাজ থেকে শুরু করে সিনেমার পর্দায় নায়ক—এই যাত্রা শুধু সাফল্যের নয়, এক দৃঢ় মানসিকতার প্রতীক।
আজও যখন তিনি বলেন, “আমি এখনও সেই ২০০ টাকার ছেলেটি”— তখন বোঝা যায়, আসল নায়ক সেই, যে নিজের অতীত ভুলে যায় না। 🌟

Read more

Local News