Friday, May 16, 2025

১০ লাখ নয়, চাই ন্যায়বিচার—ধুলিয়ানে নিহত পরিবার বলছে, শান্তির জন্য দরকার পুলিশ ক্যাম্প

Share

১০ লাখ নয়, চাই ন্যায়বিচার—ধুলিয়ানে নিহত পরিবার বলছে!

“টাকা দিয়ে কী হবে? আমার স্বামী আর শ্বশুর তো ফিরে আসবে না! চাই দোষীদের শাস্তি, চাই নিরাপত্তা”—কান্না ভেজা চোখে বললেন চন্দন দাসের স্ত্রী পিঙ্কি।
একই সুরে বললেন পারুল দাস, নিহত হরগোবিন্দ দাসের স্ত্রী—“আমরা টাকা নিতে চাই না। চাই যেন আর কারও বাড়িতে এরকম শোক না আসে।”

বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে ঘোষণা করেন, শমসেরগঞ্জের হিংসায় নিহত তিন পরিবারের প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই আর্থিক সহায়তা ফিরিয়ে দিয়েছেন হরগোবিন্দ-চন্দনের পরিবার।

শুধু টাকা নয়, দরকার নিরাপত্তা

শুধু ক্ষতিপূরণে কোনও ক্ষতি পূরণ হয় না—এটাই বারবার উঠে আসছে পরিবারের গলায়। পিঙ্কির কথায়, “যে গ্রামে দিনের আলোয় মানুষ খুন হয়, সেখানে কীভাবে টাকা শান্তি এনে দিতে পারে? পুলিশ যদি সেদিন সময়মতো আসত, তাহলে হয়তো এই দুটো প্রাণ চলে যেত না।”

তাঁদের দাবি, যতদিন না গ্রামে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হচ্ছে, ততদিন সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তার অনুভব ফিরবে না।

পুরোহিত-ক্ষৌরকার মেলেনি, শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করল কীর্তন দল

হিংসার পর শুধু প্রাণহানি নয়, সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে পরিবারটি। হরগোবিন্দ ও চন্দনের আদ্যশ্রাদ্ধের দিন কোনও পুরোহিত বা ক্ষৌরকার সাহস করে আসেননি। পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে স্থানীয় কীর্তন দলের সহযোগিতায়। এই চিত্র যেন আরও গভীর করে তুলেছে তাঁদের যন্ত্রণা।

তদন্তে নেমেছে পুলিশ, গ্রেফতার ২

জাফরাবাদে পিতা-পুত্রের খুনের ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের সুতি এবং বীরভূমের মুরারই থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে নিহতের পরিবার চায়, শুধু গ্রেফতার নয়—সঠিক তদন্ত হোক, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।

অন্য মৃত্যু নিয়েও বিতর্ক

একই দিন সুতি এলাকায় ইজাজ আহমেদ নামে আরও এক ব্যক্তি গুলিতে নিহত হন। তৃণমূল ও রাজ্য প্রশাসনের দাবি, বিএসএফ-এর গুলিতেই ওই মৃত্যু। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “এক জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, এর প্রভাব মুর্শিদাবাদের যুবকদের উপর পড়তে পারে যারা বাইরে কাজ করে। বদনামের ছাপ যাতে না পড়ে, প্রশাসনকে সঠিক পদক্ষেপ করতেই হবে।”

শেষ কথা

হরগোবিন্দ ও চন্দনের পরিবার শুধু সাহায্য নয়, নিরাপত্তা ও সম্মানের দাবিদার। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার অর্থমূল্য না দেখে, বিচার ও নিরাপত্তার গুরুত্বকেই বড় করে দেখছেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে ধুলিয়ানের এক প্রান্ত থেকে উচ্চারিত হচ্ছে এক সহজ কিন্তু শক্তিশালী বার্তা— “টাকা নয়, চাই শান্তি, চাই বিচার।”

মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ

Read more

Local News