১০০ যুদ্ধবিমানের তান্ডব
শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নিল ইজরায়েলের পূর্বঘোষিত হুঁশিয়ারি। প্রায় ২৫ দিনের প্রস্তুতি শেষে ইরানের সামরিক ঘাঁটিতে তান্ডব চালিয়েছে ইজরায়েলি বায়ুসেনা। ১০০টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের সাহায্যে তিন পর্যায়ে পরিচালিত এই অপারেশন বিশ্বরাজনীতিতে সাড়া ফেলেছে।
১০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার: অদৃশ্য স্টেলথ টেকনোলজি
ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তাদের অভিযানে অন্তত ১০০টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে অধিকাংশই ছিল আমেরিকার তৈরি অত্যাধুনিক এফ-১৫আই এবং এফ-৩৫ লাইটনিং-২। এই বিমানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল স্টেলথ প্রযুক্তি, যা রাডারে ধরা পড়ে না। ইজরায়েলি বিমানগুলির মিশনের লক্ষ্য ছিল ইরানের বিভিন্ন সামরিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত হানা। তিনটি পর্যায়ে এই আক্রমণ পরিকল্পিতভাবে চালানো হয়, যাতে ইরানের সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেওয়া যায়।
অপারেশনের নাম: অনুতাপের দিন
ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে তিন দফায় পরিচালিত হয় এই আক্রমণ। অপারেশনের নাম রাখা হয় “ডেজ অফ রিপেন্ট্যান্স” বা “অনুতাপের দিন”। প্রথম পর্যায়ে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হামলা চালানো হয় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং ড্রোন কেন্দ্রগুলিতে।

ভোরের আক্রমণ: সিরাজ এবং কারাজে ধ্বংসযজ্ঞ
প্রথম পর্যায়ে ভোর চারটায় ইজরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলি তেহরান ও কারাজ শহরে আক্রমণ চালায়। এফ-১৬আই সুফা এবং হেরন ড্রোন ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এই আক্রমণে কেঁপে ওঠে পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সামরিক কাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া ছিল এই প্রথম দফার মূল লক্ষ্য।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ইজরায়েলি বায়ুসেনা সিরাজ শহরে আইআরজিসির সামরিক ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালায়। এছাড়া ইলাম এবং কুর্দিস্তান প্রদেশের ২০টিরও বেশি লক্ষ্যে আঘাত হানে তারা। রাডার ফাঁকি দিতে উচ্চ প্রযুক্তির জ্যামার ব্যবহার করে ইজরায়েল।
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে ‘লাইভ’ পর্যবেক্ষণ
ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই আক্রমণ চলাকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। সেখানে বসে তিনি হামলার সরাসরি সম্প্রচার দেখছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট, যিনি দুই দিন আগেই ইজরায়েলি পাইলটদের সঙ্গে দেখা করে এই আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ইরানের উপর আক্রমণ করলে ইজরায়েলের শক্তি সম্পর্কে তারা নতুন করে উপলব্ধি করবে।
ইজরায়েলের হুঁশিয়ারি এবং আমেরিকার পাশে থাকা
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাঘারি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরান যদি আরও কোনো হামলার চেষ্টা করে, তবে একইভাবে কড়া জবাব দেওয়া হবে। এদিকে, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ফোন করে সংহতি প্রকাশ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও জানানো হয়, এই পদক্ষেপ ইজরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই নেওয়া হয়েছে।

ইরানের পাল্টা প্রস্তুতি
ইরানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আইআরজিসি। তাদের উচ্চপদস্থ এক সামরিক কর্মকর্তা ইজরায়েলি সেনাদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তারা ইজরায়েলকে উচিত শিক্ষা দিতে প্রস্তুত। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তেল আভিভে আক্রমণ করতে পারে, কারণ তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সামরিক শক্তি এবং ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব নেই।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি: ইজরায়েলের নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
নেতানিয়াহু ইরানের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে বাঁচতে আমেরিকার কাছ থেকে নতুন বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা “থাড” সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া ইজরায়েলের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম, ডেভিস স্লিং এবং অ্যারোও প্রস্তুত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের আবেদন
এই আক্রমণের পর রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস ইজরায়েল এবং ইরান উভয়কেই সংযত থাকার আহ্বান জানান। তবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংঘর্ষে স্থায়ী শান্তি এখন অলীক কল্পনার মতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইজরায়েল এবং ইরানের এই তীব্র বৈরিতা পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

