শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ জ্ঞান হারানোও কি হৃদ্রোগের লক্ষণ হতে পারে?
হৃদ্রোগ মানেই আমরা সাধারণত ধরে নিই বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, শরীর ঘামে ভিজে যাওয়া এবং তারপর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। তবে হৃদ্রোগের লক্ষণ কেবল এটাই নয়, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এর উপসর্গ অনেকটাই ভিন্ন হতে পারে।
বর্তমানে শুধু বয়স্ক পুরুষরাই নয়, তরুণ-তরুণীরাও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা বুঝতেই পারেন না যে, তাঁদের যে অস্বস্তিগুলো হচ্ছে, তা আসলে হৃদ্রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, পুরুষ ও মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ এক রকম নয়। তাই যেকোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কেন মহিলাদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মহিলাদের হৃদ্রোগের পেছনে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
✅ অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও শারীরিক পরিশ্রম: চাকরি, পরিবার এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে অনেক মহিলাই অতিরিক্ত স্ট্রেসের মধ্যে থাকেন, যা তাঁদের হৃদ্যন্ত্রের উপর চাপ ফেলে।
✅ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাবারের অভ্যাস: অনেক মহিলাই নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান না, ব্যস্ততার কারণে শরীরের প্রতি যত্ন নিতে পারেন না। ফলে তাঁদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
✅ মেনোপজের পর হৃদ্রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি: ঋতুবন্ধ (মেনোপজ) হলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়, যা হার্টের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করত। তাই ৪৫-৫০ বছরের পর মহিলাদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
✅ ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ: বর্তমানে অনেক মহিলা ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন, যা হৃদ্রোগের অন্যতম কারণ।
✅ স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপ: ভারতের মতো দেশে ৪ কোটি মহিলা স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন। ওজন বেড়ে গেলে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণও বাড়ে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
কোন লক্ষণগুলি অবহেলা করবেন না?
👉 হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করা: যদি হাঁটাহাঁটি বা সিঁড়ি ভাঙার সময় অতিরিক্ত ক্লান্তি আসে এবং শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে এটি হৃদ্রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
👉 বুকে ব্যথা নয়, কিন্তু বাঁ কাঁধ বা পিঠে ব্যথা: মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে তীব্র ব্যথা নাও থাকতে পারে, বরং বাঁ কাঁধ, পিঠ বা চোয়ালের দিকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
👉 অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা: যদি প্রতিদিন স্বাভাবিক কাজকর্মের পরেও অস্বাভাবিক ক্লান্তি লাগে, তবে এটি হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
👉 বুক ধড়ফড় করা: হার্টের অসুস্থতার অন্যতম লক্ষণ হল হঠাৎ করেই হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাওয়া।
👉 অতিরিক্ত ঘাম হওয়া: কোনও কারণ ছাড়াই যদি অতিরিক্ত ঘাম হয় এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
👉 হঠাৎ মাথা ঘোরা বা জ্ঞান হারানো: রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হলে বা হার্ট ঠিকমতো কাজ না করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম পৌঁছায়, ফলে হঠাৎ জ্ঞান হারানো বা মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে।
👉 ক্রমাগত শুকনো কাশি: ঠান্ডা লাগেনি, অথচ বারবার কাশি হচ্ছে? কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোচ্ছে? এগুলোও হৃদ্রোগের উপসর্গ হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
যদি উপরোক্ত কোনও উপসর্গ টানা কয়েক দিন ধরে চলতে থাকে, তবে দেরি না করে অবশ্যই কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে যদি—
✔️ আপনি ৪০ বছরের বেশি হন এবং পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস থাকে।
✔️ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, বা কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকে।
✔️ ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস থাকে।
✔️ অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা অনিদ্রার সমস্যা থাকে।
হৃদ্রোগ প্রতিরোধে কী করবেন?
✅ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন: ৪০ বছর পার হলেই নিয়মিত ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, ও ইসিজি পরীক্ষা করানো জরুরি।
✅ সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন: তেল-মশলা কমিয়ে বেশি করে ফল, সবজি ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খান।
✅ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: ঘুমের অভাব হার্টের জন্য ক্ষতিকর, তাই ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।
✅ নিয়মিত শরীরচর্চা করুন: হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম হৃদ্যন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
✅ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন: মেডিটেশন, গান শোনা বা বই পড়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
উপসংহার
হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ্রোগ যে শুধু পুরুষদের সমস্যা, এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মহিলারাও সমানভাবে ঝুঁকির মধ্যে আছেন এবং তাঁদের উপসর্গগুলো পুরুষদের থেকে আলাদা হতে পারে। তাই যে কোনও ধরনের অস্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন বা অস্বস্তি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সুস্থ জীবনযাপন ও সচেতনতার মাধ্যমেই হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে পুণ্যার্থীদের সরাতে কঠোর পদক্ষেপ, ঘোড়সওয়ার পুলিশ নামাল যোগী সরকার