হিন্ডেনবার্গ থেকে কেনিয়ার ঘুষ-কাণ্ড
গত বছর (২০২৩) জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত গৌতম আদানি এবং তাঁর আদানি গোষ্ঠী বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। কখনও আমেরিকার ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্ট, কখনও কেনিয়ার আদালতের নির্দেশে থমকে গেছে তাঁদের বড় প্রকল্প। একাধিক বিতর্কে শিল্পপতি আদানির গায়ে দুর্নীতির দাগ লেগেছে।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট ও আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার বাজারে পতন
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ধাক্কা আসে, যখন মার্কিন গবেষণা সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। তারা একটি রিপোর্টে দাবি করে, আদানি গোষ্ঠী বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে দেখিয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই শেয়ার বাজারে নেমে আসে বিপর্যয়। মুহূর্তে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় আদানি গোষ্ঠীর। বিশ্ব ধনীদের তালিকায়ও বেশ কয়েক ধাপ নিচে নেমে যান গৌতম আদানি।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। বিচারপতি এএম সাপ্রের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে এই কমিটি জানায়, শেয়ারদর বাড়ানোর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও ততদিনে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের বাজারে ধাক্কা খাওয়ার প্রভাব কমতে শুরু করে।
কেনিয়ায় চুক্তি বাতিল ও স্থানীয় শ্রমিকদের প্রতিবাদ
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে কেনিয়ার নাইরোবি বিমানবন্দর নিয়ে আদানি গোষ্ঠী একটি চুক্তি করেছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, পরবর্তী ৩০ বছরের জন্য বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেত তাঁরা। কিন্তু কেনিয়ার আদালত সাময়িকভাবে এই চুক্তি স্থগিত করে। স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়ন দাবি করে, এই চুক্তির ফলে কেনিয়ার বহু শ্রমিক চাকরি হারাবেন এবং বিদেশি শ্রমিকদের জন্য কাজের সুযোগ বাড়বে।
কেনিয়ার সরকারের দাবি, এটি একটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে চুক্তি, তবে বিমানবন্দর পুরোপুরি বিক্রি করা হয়নি। কিন্তু চুক্তি স্থগিত হওয়ায় আদানি গোষ্ঠীর আফ্রিকান প্রকল্পে বড় ধাক্কা লাগে।
বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাধা ও ঘুষের অভিযোগ
নাইরোবি বিমানবন্দরের পর কেনিয়ার একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পও আদালতের নির্দেশে আটকে যায়। কেনিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে আদানি এনার্জি সলিউশনস-এর এই যৌথ প্রকল্পের জন্য ৭৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করার কথা ছিল। আদালতের রায়ে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
একই সময়ে, ভারতের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে গৌতম আদানি এবং তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে। অভিযোগে নাম জড়ায় তাঁর ভাইপো সাগর আদানি এবং সিইও বিনীত জৈনেরও।
মার্কিন তদন্তে নতুন মোড়
ঘুষ কাণ্ডের জেরে মার্কিন আদালত আদানি গোষ্ঠীর কয়েকজন শীর্ষ কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই বিতর্কের কারণে আদানি গ্রিন এনার্জি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে
গত ২২ মাসে একাধিক বিতর্কে জড়ালেও আদানি গোষ্ঠী বহু ক্ষেত্রেই আইনি পথে নিজেদের ক্লিনচিট পেয়েছে। তবে কেনিয়ার মতো আন্তর্জাতিক বাজারে চুক্তি বাতিল এবং ঘুষ কাণ্ডের অভিযোগে তাঁদের ভাবমূর্তি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় পড়তে পারে।