হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশ!
শেখ হাসিনার শাসনকাল শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম’-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে শান্তি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং বাকস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা দূর করা না হলে বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশে শান্তি ফেরাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের পাঁচ দফা সুপারিশ
১️⃣ অপরাধ ও বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা:
🔹 বিচার-বহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা।
🔹 এসব অপরাধের মূল হোতাদের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আইনের আওতায় আনা।
🔹 ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
২️⃣ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার:
🔹 মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে পুরো পুলিশবিধি সংশোধন করা।
🔹 গুরুতর অপরাধ ছাড়া পুলিশের গুলি চালানোর অধিকার সীমিত করা।
🔹 ‘র্যাব’ বাহিনী বিলুপ্ত করা, কারণ তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
৩️⃣ বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা:
🔹 নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক বিরোধী দল ও সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করতে বিতর্কিত আইন বাতিল বা সংশোধন করা।
🔹 সাইবার নিরাপত্তা আইন, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন, মানহানি আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করা।
🔹 সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর বেআইনি নজরদারি ও গ্রেফতার বন্ধ করা।
৪️⃣ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা:
🔹 বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা গঠন করা প্রয়োজন।
🔹 কোনো রাজনৈতিক দলকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা যাবে না।
🔹 রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আওতায় নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়।
৫️⃣ আর্থিক সুশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা:
🔹 দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
🔹 ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও বড় মাপের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা।
🔹 উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির দায়ে শাস্তির আওতায় আনা।
বাংলাদেশ নিয়ে কেন উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রপুঞ্জ?
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম-খুন এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপুঞ্জ মনে করছে, যদি এসব সমস্যার সমাধান করা না হয়, তাহলে বাংলাদেশে অস্থিরতা বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং প্রশাসনিক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে।
শেষ কথা
রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষা, বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে। নতুন সরকারের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ— ন্যায়বিচার, সুশাসন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। এখন দেখার বিষয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়!
“রাজ্যের বাজেট দিশাহীন!”— এক সুরে আক্রমণ শানালেন শুভেন্দু, নওশাদ ও বাম-কংগ্রেস