হাসিনাকে ফেরত দেবে না ভারত
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে ফেরত দেওয়া হবে না, এমনটাই জানিয়েছে ভারত। রবিবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি আলোচনাসভায় এই প্রসঙ্গ উঠে আসে। মাহফুজ জানান, তিনি এমন খবর শুনেছেন যে ভারত সরকার ইতিমধ্যেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এবং হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দেওয়া হবে না।
ভারত কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
ঢাকা ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লিকে নোট ভার্বাল (কূটনৈতিক চিঠি) পাঠিয়ে হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, তবে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেননি। সূত্রের খবর, ভারত সরকার এই চিঠির ‘আইনি বৈধতা’ খতিয়ে দেখছে।
কূটনৈতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনও অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রত্যর্পণ চাইলে, তার সমস্ত আইনি দিক বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বিদেশ মন্ত্রকের অভিমত, এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে, তাই দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। সব দিক পর্যালোচনা করে চিঠির জবাব দেওয়া হবে। তবে তাতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
মাহফুজের বক্তব্য
রবিবারের আলোচনায় মাহফুজ বলেন, ‘‘ভারত সরকার একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওরা হাসিনাকে ফেরত দেবে না। এটা আমরা শুনেছি।’’ তবে ঢাকার পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার, তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির প্রসঙ্গ তুলে মাহফুজ বলেন, ঢাকা মিত্র রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ‘বাস্তবভিত্তিক’ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কোনও দেশের কাছে নতজানু হওয়া কিংবা হঠকারিতা প্রদর্শন করা, দুটোর কোনওটিই তাদের উদ্দেশ্য নয়।
হাসিনার বর্তমান পরিস্থিতি
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে গণ আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে ভারতে চলে আসেন তিনি। তারপর থেকেই তিনি ভারতে রয়েছেন। তবে তাঁর সঠিক অবস্থান গোপন রাখা হয়েছে।
হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ অগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। এই সরকার দিল্লিকে চিঠি দিয়ে হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশের দাবি এবং ভারতের অবস্থান
ঢাকা চিঠি পাঠালেও ভারতের সরকার বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিকভাবে নীরব রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভারত আপাতত কোনও তাড়াহুড়ো করতে চায় না। এই বিষয়ে ভারত আইনি দিক খতিয়ে দেখার পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপ নেবে।
ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি দীর্ঘদিন ধরেই কৌশলগত, তবে কখনও কখনও সংবেদনশীল। তাই হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে এই নীরবতা তাৎপর্যপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট
এই ঘটনাটি শুধু দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতের কৌশল নির্ভর করছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়গুলিও ভারতের নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
উপসংহার
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যু দুই দেশের সম্পর্কের একটি সংবেদনশীল অধ্যায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হলেও ভারত নিজের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছে। মাহফুজের বক্তব্য এই ইস্যুকে আরও স্পষ্ট করেছে যে, দিল্লি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে স্থির থেকেছে।
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা এবং ভবিষ্যতের পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে এই পরিস্থিতির সমাধান কীভাবে হবে।