হরিয়ানায় কংগ্রেসের পরাজয়ের পর, রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গেছে। কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার ফলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বাকি শরিক দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। তৃণমূলের নেতারা এই পরিবর্তনের প্রতি যথেষ্ট খুশি, কারণ তারা মনে করছেন, কংগ্রেসের এই পরাজয়ের ফলে এখন তাদের কাছে নতুন সুযোগ এসেছে।
লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ৯৯টি আসনে জয়ী হয়েছিল। সেই সময় রাহুল গান্ধী বিরোধী দলের নেতারূপে আলোচনায় ছিলেন। তবে হরিয়ানায় কংগ্রেসের পরাজয়, মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন এবং উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনগুলোতে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্যান্য শরিক দলের দূরত্ব আরও বাড়িয়েছে। আসন্ন সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন শরিক দলগুলি।
তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তারা বলছেন, “হরিয়ানার নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয় তাদের শক্তি কমিয়ে দিয়েছে। এখন কংগ্রেসকে অন্যান্য বিরোধী দলগুলির মত অনুসরণ করতে হবে।” এদিকে, সমাজবাদী পার্টির এক নেতা মন্তব্য করেন, “কংগ্রেস যে উত্তরপ্রদেশ বা তামিলনাড়ুতে ভাল ফল করেছে, তা এসপি ও ডিএমকে-র মতো দলের সহায়তার জন্য। হরিয়ানার পরাজয় প্রমাণ করে, কংগ্রেস একা লড়াই করতে পারে না।”
এখন কংগ্রেস মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারের এনসিপি এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে দর-কষাকষি করছে। সেখানে কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে পাঁচটি আসনের দাবি করলেও অখিলেশ যাদব রাজি না হওয়ায় তারা কোনো প্রার্থী দেয়নি। মহারাষ্ট্রে শরিকদের কাছ থেকে আসন ছাড়তে না চাওয়ার মনোভাব প্রকাশের ফলে তাদের সম্পর্ক আরও জটিল হচ্ছে।
শুক্রবার মহারাষ্ট্রের প্রার্থী তালিকা নিয়ে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রের নেতা বালাসাহেব থোরাটকে তোপ দেগেছেন। তিনি প্রশ্ন করেছেন কেন দলিত ও ওবিসি অধ্যুষিত আসনগুলো শরিকদের কাছে ছেড়ে দেওয়া হলো। শরিক দলের নেতারা মনে করছেন, রাহুলের এই মন্তব্য কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দেয়। পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বামেদের সঙ্গে আসন বণ্টনে কংগ্রেসের অনীহা এই মনোভাবকে স্পষ্ট করে।
কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য টি এস সিংহদেও দাবি করেছেন, “রাহুল গান্ধী এমন কিছু বলেননি। তিনি মূলত সকলকে প্রার্থী তালিকায় জায়গা দেওয়ার কথা বলেছিলেন।” তবে শরিক দলের নেতাদের ধারণা, রাহুল বুঝতে পারছেন যে মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি কংগ্রেসের পক্ষে ভালো নয়। বিজেপি ও শিবসেনার জোট সরকারের ‘লড়কি বহিন যোজনা’র মাধ্যমে জনসমর্থন অর্জন হচ্ছে।
এদিকে, তৃণমূলের সূত্রে বলা হচ্ছে, “যদি মহারাষ্ট্রেও এমভিএ জোট হারিয়ে যায়, তাহলে সংসদে ইন্ডিয়া জোটের প্রভাব অনেকটাই কমে যাবে।” তারা মনে করছে, তৃণমূল রাজ্যের ছ’টি আসনের উপনির্বাচনে পাঁচটি জয়ী হলে ভালো অবস্থানে থাকবে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন শুধু বলেন, “আমরাই ইন্ডিয়া জোটের একমাত্র শরিক, যারা লোকসভায় ৪২টি আসনে একাই লড়েছি। বিধানসভায় ২৯৪টি আসনেও একাই লড়ব।” এই সব ঘটনার পর স্পষ্ট যে, কংগ্রেসের বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তাদের শরিক দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছে, যা রাজনৈতিক পর landscape পরিবর্তন করছে।
এভাবে হরিয়ানার নির্বাচনের পর কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় শক্তির উপর প্রশ্ন উঠছে, এবং এটি তাদের শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে। রাজনীতির এই পরিবর্তনশীল চিত্রে তৃণমূল এবং অন্যান্য দলগুলি তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে নতুন কৌশল তৈরি করছে।