হংকঙে বহুতলে আগুনের মহাপ্রলয়
হংকঙে বুধবার বিকেলে এমন একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, যা গত ১৭ বছরে দেখা যায়নি। শহরের অন্তত সাতটি বহুতল আবাসন একসঙ্গে আগুনে পুড়ে যায়, ফলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে, তবে বাস্তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দমকল কর্তৃপক্ষের। কারণ, ভবনগুলির ভিতরে এখনও অনেকেই আটকে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। নিখোঁজের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২৭৯।
■ আগুন ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে— ভয়াবহতার ছবি প্রকাশ্যে
রয়টার্স প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা বহুতলগুলির প্রায় প্রতিটি তলে আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। জানালা ভেদ করে বেরোচ্ছে আগুনের লেলিহান শিখা। চারদিক ঢেকে গেছে কালো ধোঁয়ায়।
বহুতলের নিচতলা থেকে শুরু করে একেবারে উপরের তলা পর্যন্ত আগুন একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ায় বাসিন্দারা পালাবার সুযোগই পাননি।
দমকলের ১২৮টি ইঞ্জিন, উঁচু মই ও আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র লাগিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেকটা আগুন নেভানো গেলেও তা এখনও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নয় বলে জানিয়েছেন দমকল আধিকারিকরা।
অগ্নিকাণ্ডের তীব্রতা বিচার করে ঘটনাটিকে ‘লেভেল-৫ অ্যালার্ম’ ঘোষণা করা হয়েছে— যা হংকঙের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্কতা।
■ নিহত, আহত ও আটকে পড়াদের করুণ চিত্র
অগ্নিকাণ্ডের শুরুতেই নয়জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে গুরুতর দগ্ধ চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। আগুন নেভাতে গিয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারান এক দমকলকর্মী।
মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪, এবং আরও হতে পারে বলে আশঙ্কা।
তবে দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—
🔹 প্রায় ৭০০ জনকে উদ্ধার করে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
🔹 কিন্তু মোট আবাসনগুলিতে রয়েছে প্রায় ২০০০টি অ্যাপার্টমেন্ট, এবং ৪৮০০ জনের থাকার ক্ষমতা।
সুতরাং নিখোঁজ ২৭৯ জনের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভিতরে আটকে রয়েছেন।
■ আগুন লাগার কারণ অজানা, তিনজন সন্দেহভাজন গ্রেফতার
কী ভাবে এত বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে ঘটনার পরে হংকঙ পুলিশ তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে।
তাঁরা পরিকল্পিত ভাবে আগুন লাগানোর সঙ্গে যুক্ত কিনা, নাকি দুর্ঘটনাজনিত কোনও ত্রুটি ছিল— তদন্ত চলছে।
নাগরিকরা অভিযোগ করছেন, বহুতলগুলির আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খুব পুরনো ছিল এবং রক্ষণাবেক্ষণেও সমস্যা ছিল।
■ হংকঙে ১৭ বছরের ভয়াবহতম দুর্ঘটনা
দমকল দফতরের বক্তব্য—
“এতটা ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড আমরা বহু বছর দেখিনি। অনেক আবাসনে মানুষ আটকা ছিলেন, তাঁদের কাছে পৌঁছতেই চরম সমস্যা হয়েছে।”
২০০৮ সালের পর এটাই হংকঙের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। শহরে দ্রুত ত্রাণ কাজ শুরু হয়েছে, আশেপাশের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
■ উপসংহার— আতঙ্কে শহর, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
আগুন এখনও পুরোপুরি নিভে না ওঠায়, ভিতরে আটকে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধার অভিযান চলছে। দমকলের অনুমান,
“আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে না।”
হংকঙের মানুষ ভয় ও শোকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন— একই সময়ে সাতটি বহুতলের আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘটনা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
শহরজুড়ে চলছে আতঙ্ক, আর প্রশাসন মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে— যেন মৃতের সংখ্যা আর না বাড়ে।

