পাকিস্তানকে ঘিরে নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর টানা চার দিন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত চলেছিল। সেই সংঘাত শেষ হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। তারই প্রেক্ষিতে পশ্চিম এশিয়ার শক্তিশালী দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তি এখন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বুধবার রিয়াধে সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বৈঠকের পরই দুই দেশ একটি ‘কৌশলগত এবং পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’-তে সই করে। এই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে কোনও একটির উপর হামলা হলে তা উভয়ের উপর আক্রমণ হিসেবে ধরা হবে। অর্থাৎ পাকিস্তান বা সৌদি আরব, যেই দেশ আক্রমণের শিকার হবে, অপর দেশও সমানভাবে তা নিজেদের উপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করবে।
সৌদি প্রশাসনের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া আরও দৃঢ় হচ্ছে। যে কোনও ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে সৌদি আরব এবং পাকিস্তান।” শুধু প্রতিরক্ষা নয়, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও এই চুক্তিকে এক নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে এই চুক্তির গুরুত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে ভারতের প্রেক্ষিতে। কারণ, সৌদি আরবের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও বিগত কয়েক বছরে যথেষ্ট সুদৃঢ় হয়েছে। ফলে ইসলামাবাদ-রিয়াধ ঘনিষ্ঠতা কি এক নতুন রাজনৈতিক অক্ষ তৈরি করবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৌদি আরব যদি পাকিস্তানের পাশে আরও বেশি করে দাঁড়ায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া থেকে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত এক নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ তৈরি হতে পারে।
চুক্তির পটভূমি আরও স্পষ্ট হয় সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে। কয়েক দিন আগেই কাতারের রাজধানী দোহায় ইজ়রায়েলি সেনা আকাশপথে হামলা চালায়। তাঁদের লক্ষ্য ছিল সেখানকার হামাস নেতারা। ঘটনার পর কাতার প্রকাশ্যে ইজ়রায়েলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে। শুধু তাই নয়, আমেরিকাও এই পদক্ষেপ ভালভাবে নেয়নি। মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো ঘোষণা করেন, আমেরিকা ও কাতারের মধ্যে সামরিক বোঝাপড়া নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তি নিছক একটি কূটনৈতিক চুক্তি নয়, বরং পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে এক বড় মোড় ঘোরানো ঘটনা। পাকিস্তান এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে অবস্থান শক্ত করতে চাইছে, আর সৌদি আরবও নিজেদের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারকে আরও দৃঢ় করতে চাইছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর কৌশলগতভাবে চাপে থাকা পাকিস্তান সৌদি আরবকে পাশে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। আর এই জোটবদ্ধতা ভবিষ্যতে দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ওড়িশায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ১৩৯৬ কোটির প্রতারণা মামলায় উদ্ধার কোটি টাকার সম্পদ

