Thursday, January 30, 2025

সোনার দামের পতন: বিয়ের মরসুমে আনন্দে ভাসছেন ক্রেতারা

Share

সোনার দামের পতন

বিয়ের মৌসুম ঘনিয়ে আসছে, আর সোনার দামের পতন যেন ক্রেতাদের জন্য সোনায় সোহাগা। নভেম্বর মাসে টানা সোনার দর কমে যাওয়ায় নতুন সংসার শুরু করতে যাওয়া অনেক পরিবারেই স্বস্তির হাসি। কয়েক মাস আগেই প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম যেখানে ৮১ হাজার টাকা স্পর্শ করেছিল, তা এখন নেমে এসেছে ৭৫ হাজার টাকায়।

নভেম্বরের শুরুর দিকে ৭৫,২০০ টাকার আশপাশে নেমে আসা সোনার দর আরও কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্ডিয়া বুলিয়ান অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইবিজেএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই মাসের ১৩ তারিখে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল ৭৫,২১০ টাকা। এই দর কমার সম্ভাবনা থাকায় বিয়ের গয়না কেনার জন্য পরিবারগুলোর মধ্যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।

কেন কমছে সোনার দাম?

সোনার দামে এই পতনের পেছনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক কারণ জড়িত। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত অক্টোবরে ভারতের উৎসবের মৌসুম শেষ হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে সোনার চাহিদা কমেছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং ডলার শক্তিশালী হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দামে প্রভাব পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর ডলার শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি আমেরিকার বাজারে আমদানির উপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা সোনার চাহিদায় প্রভাব ফেলতে পারে।

সোনার বিভিন্ন ক্যারেট ও তার ব্যবহার

সোনাকে সাধারণত তিনটি ক্যারেটে ভাগ করা হয়: ২৪ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট, এবং ১৮ ক্যারেট। এর মধ্যে ২৪ ক্যারেট সবচেয়ে বিশুদ্ধ সোনা, যা মূলত মুদ্রা এবং বার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, গহনা তৈরির জন্য ২২ ও ১৮ ক্যারেট সোনা ব্যবহৃত হয়। ২৪ ক্যারেটের সোনা ৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ হয়, ২২ ক্যারেট সোনা ৯১ শতাংশ বিশুদ্ধ, আর ১৮ ক্যারেটে থাকে ৭৫ শতাংশ সোনা।

গহনার ক্ষেত্রে শুধু সোনার মূল্যের উপর নির্ভর করা হয় না; এতে মজুরিও যুক্ত হয়। এছাড়া, ৩ শতাংশ জিএসটি যুক্ত হওয়ার ফলে গহনার দাম আরও কিছুটা বাড়ে।

আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

বিশ্ব বাজারেও সোনার দাম কমেছে। সম্প্রতি ১২ নভেম্বর স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্স ০.৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৬০৪.৮৭ ডলার। কমেক্স গোল্ড ফিউচারের দরও কিছুটা কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সোনার দাম আরও কমতে পারে। এলকেপি রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট যতীন ত্রিবেদীর মতে, সোনার দাম ৭২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।

বিশ্ববাজারে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ঘটনাও সোনার দামে প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সাময়িক কমে যাওয়ার ফলে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদাও কমেছে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকান ফেডারেল ব্যাংকের আসন্ন কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (CPI) ঘোষণা করলে সোনার দামে আরও পতন হতে পারে। আমেরিকার মুদ্রাস্ফীতি যদি ঊর্ধ্বমুখী হয়, তবে সোনার মূল্য আরও কমতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে সোনার দর ৭২ হাজার টাকার নিচে নামার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ক্রেতাদের জন্য আরও স্বস্তির বিষয়।

সোনার দাম কমার এই ধারা বিয়ের মৌসুমে যারা গয়না কিনতে চান, তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

Read more

Local News