সেনার শীর্ষে ফিল্ড মার্শাল মুনির!
পাকিস্তানের রাজনীতি ও সেনাবাহিনীর সম্পর্ক বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রে। এবার সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করল শাহবাজ শরিফের সরকার। ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ফিল্ড মার্শাল র্যাঙ্কধারী জেনারেল আসিম মুনির এখন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক ক্ষমতার আসনে। শুধু তাই নয়—সংবিধান পরিবর্তন করে তাঁর জন্য তৈরি হলো একেবারে নতুন পদ: “চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্সেস”, অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
🏅 নতুন পদে নজির গড়লেন মুনির
পাক সেনার ইতিহাসে এই পদ আগে কখনও ছিল না। এখন পর্যন্ত স্থল, নৌ ও বায়ুসেনার প্রধানরা আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করতেন। কিন্তু শাহবাজ শরিফের সরকার পাকিস্তানের সংবিধানের ২৪৩ নম্বর ধারা সংশোধন করে মুনিরের জন্য এই নতুন পদ সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ) এই বিল পাস হয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।
এর ফলে, জেনারেল আসিম মুনির এখন শুধু সেনাপ্রধানই নন, বরং দেশের তিন বাহিনীর একমাত্র সর্বাধিনায়ক।
⚖️ আইনি রক্ষাকবচে ঘেরা সেনা প্রধান
নতুন সংবিধান সংশোধনীতে মুনিরকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ আইনি সুরক্ষা—যাতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আদালতে মামলা করা যাবে না। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে সেনাপ্রধানের সিদ্ধান্ত বা কার্যকলাপ নিয়েও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে গেল।
এই রক্ষাকবচের ফলে সেনাবাহিনীর প্রভাব আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
🏛️ সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ছাঁটাই
শুধু সেনা আইনে নয়, সরকার একইসঙ্গে আরেকটি বিতর্কিত বিলও পাশ করেছে। এবার থেকে সংবিধান সংক্রান্ত মামলাগুলির দায়িত্ব আর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে না।
নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, এসব মামলা যাবে একটি নতুন সাংবিধানিক আদালতে—যার নিয়ন্ত্রণও অনেকাংশে সরকারের অধীন থাকবে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্ক করেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁদের মতে, সরকার এবং সেনাবাহিনী এখন একসঙ্গে মিলে প্রশাসনিক ও বিচারিক ক্ষমতা দখল করছে।
💬 বিরোধীদের কণ্ঠে উদ্বেগ
বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এই দুটি বিলের ফলে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক কাঠামো বিপদের মুখে পড়েছে।
একজন বিরোধী সাংসদ মন্তব্য করেছেন—
“এই বিল দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক। সেনাবাহিনী এখন শুধু শক্তিশালী নয়, কার্যত অস্পর্শযোগ্য।”
🪖 পর্দার আড়ালের রাজনীতি
অনেকে মনে করছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মুনির ও তাঁর নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী দেশের রাজনীতিতে যে প্রভাব দেখিয়েছে, তা থেকেই সরকার তাঁর অবস্থান আরও মজবুত করতে চায়। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সরকারের চলমান সংঘাতও এই বিলের অন্যতম কারণ।
🌍 শেষ কথা
একদিকে সেনাপ্রধানের হাতে অগাধ ক্ষমতা, অন্যদিকে বিচারব্যবস্থার কর্তৃত্ব হ্রাস—এই দুই পদক্ষেপ পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ বদলে দিতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এখন সময়ই বলবে—এই পরিবর্তন স্থিতিশীলতা আনবে, না কি গণতন্ত্রকে আরও দুর্বল করে তুলবে।

