ডিম আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অত্যন্ত পরিচিত এবং প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এটি প্রোটিনের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। তবে ডিম কীভাবে খেলে পুষ্টি সর্বাধিক উপকারে আসে—সেদ্ধ না ওমলেট? এ বিষয়ে অনেকের মনেই দ্বিধা থাকে। একদিকে সেদ্ধ ডিম সহজপাচ্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ, অন্যদিকে ওমলেটের স্বাদ অনেকেই বেশি পছন্দ করেন। পুষ্টিবিদদের মতে, ডিমের পুষ্টিগুণ পেতে সঠিক রান্নার পদ্ধতি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেদ্ধ ডিমের পুষ্টিগুণ
সেদ্ধ ডিম স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের সহজ উৎস। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর মতে, একটি হার্ড বয়েলড ডিমে থাকে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন। এর পাশাপাশি ডিমে পাওয়া যায় ভিটামিন বি১২, এ, ডি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ। ডিমে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষ রক্ষা করে এবং পেশি গঠনে সহায়ক।
একটি সেদ্ধ ডিমে মাত্র ৭৮ ক্যালোরি থাকে, যা ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণকারী ডায়েটের জন্য আদর্শ। সঠিক তাপমাত্রায় ডিম সেদ্ধ করলে এর প্রোটিন ঠিক থাকে এবং শরীর সহজেই তা শোষণ করতে পারে। তবে অতিরিক্ত সেদ্ধ হলে ডিমের প্রোটিনের গুণাগুণ কিছুটা কমে যেতে পারে। তাই সুসেদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত, যা অতিরিক্ত শক্ত বা কাঁচা নয়।
ওমলেটের পুষ্টিগুণ
ওমলেটের পুষ্টিগুণ অনেকটাই নির্ভর করে এটি কীভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে তার ওপর। সাধারণত তেলে ভাজার সময় উচ্চ তাপে ডিমের কিছু পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। পেঁয়াজ, লঙ্কা, শাকসবজি, মুরগির মাংস বা চিজ যোগ করে ওমলেট তৈরি করা হলে তা আরও স্বাদ ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হয়। তবে বেশি তেল বা মাখন ব্যবহারে ক্যালোরি বেড়ে যায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত নয়।
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলেন, “উচ্চ তাপমাত্রায় তেলে ভাজার কারণে ওমলেটের প্রোটিনের গুণাগুণ কিছুটা নষ্ট হয়। তবে অল্প তেলে সব্জি দিয়ে ওমলেট করলে এটি পুষ্টিকর হতে পারে।”
কোনটি বেশি উপকারী?
ডিমের উপকারিতা নির্ভর করে তার রান্নার পদ্ধতির ওপর।
- সেদ্ধ ডিম: এটি তেল বা অতিরিক্ত মসলা ছাড়াই রান্না হয় বলে এর ক্যালোরি নিয়ন্ত্রিত থাকে। যারা ওজন কমাতে চান বা শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ।
- ওমলেট: যারা বেশি সময় পেট ভরা রাখতে চান বা মজাদার খাবার খেতে চান, তারা সবজি বা অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান যোগ করে ওমলেট খেতে পারেন। তবে কম তেলে রান্না করা উচিত।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ডিমের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে হলে সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করা জরুরি।
- সেদ্ধ ডিমের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সেদ্ধ না করে এটি পুরোপুরি সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
- ওমলেট তৈরি করলে তাপমাত্রা এবং তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন। কম তেলে এবং সবজি মিশিয়ে ওমলেট তৈরি করা পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
ডিমের উভয় রূপেই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টিগুণ। তাই খাদ্যতালিকায় সেগুলি আপনার প্রয়োজন ও স্বাস্থ্যের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করুন।

