Monday, December 1, 2025

সেতু বাঁচাতে বিমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ভারতীয় রেল

Share

বিমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ভারতীয় রেল

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পীরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণির উপত্যকায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হচ্ছে উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক প্রকল্পের চেনাব এবং অঞ্জি খাদ সেতু। এই সেতুগুলি নির্মাণে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বিমান শিল্পের এরোডায়নামিক বৈশিষ্ট্য, যার মাধ্যমে সেতুর স্থায়ীত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। এই সেতুগুলির মাঝে বাতাসের ধাক্কা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে ঝোড়ো হাওয়ার ফলে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

চেনাব সেতুর অনন্য ডিজাইন

জম্মু-কাশ্মীরের পীরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণির উপত্যকার চন্দ্রভাগা বা চেনাব নদীর উপরে নির্মিত চেনাব সেতুর পাটাতনের উচ্চতা প্রায় ৩৫৯ মিটার, যা প্রায় ১২০ তলা বাড়ির সমান। এই সেতু এমন একটি অঞ্চলে নির্মিত, যেখানে বাতাসের গতি অনেক বেশি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চেনাব সেতুর উপরের অংশে ঘণ্টায় ২০০-২৩০ কিলোমিটার গতি নিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। এমন শক্তিশালী বাতাসের ধাক্কা থেকেও সেতু যাতে নিরাপদ থাকে, সেই জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে।

সেতুর গায়েও বিশেষ পাত বসানো হয়েছে যাতে বাতাসের চাপ থেকে সেতু রক্ষা পায়। এই পাতগুলি সেতুর দু’পাশে স্থাপন করা হয়েছে, যা হাওয়ার ধাক্কায় সেতুর উপর ও নিচ দিয়ে বাতাসকে পেরিয়ে যেতে সহায়তা করে। যদি বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার পৌঁছে যায়, তবে সেতুর সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাল হয়ে যাবে, এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।

অঞ্জি সেতুর অদ্বিতীয় ডিজাইন

অঞ্জি সেতু চেনাব সেতুর থেকেও আরও উচ্চতায় স্থাপিত। এর স্তম্ভের শীর্ষ প্রায় ৩৩১ মিটার উচ্চতায়, এবং এটি ভারতের একমাত্র ঝুলন্ত রেলসেতু। এই সেতুর পাটাতন প্রায় ১৩৫ মিটার গভীর গিরিখাতের উপর দিয়ে গিয়েছে। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১৩ কিলোমিটার বাতাসের গতি সইতে পারে। ঝুলন্ত এই সেতুর উপর দিয়ে বাতাসের গতিবেগ যদি ৯০ কিলোমিটার পৌঁছে, তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

সেতুর স্থায়ীত্ব রক্ষা করার জন্য বিশেষ পাত বসানো হয়েছে, যা বিমানের সামনের অংশের আদলে তৈরি করা হয়েছে। এই পাতগুলি বাতাসের ধাক্কাকে সেতুর ক্ষতি করার আগেই বিভক্ত করে এবং সেতুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া সেতুতে শ’দুয়েক সেন্সর বসানো হয়েছে, যা বাতাসের গতিবেগ পরিমাপ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল পরিবর্তন করবে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নজরদারি ব্যবস্থা

চেনাব এবং অঞ্জি সেতু দু’টি সেতুতেই কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হবে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেতুর নিরাপত্তা এবং স্থায়ীত্ব বজায় রাখতে সেতু দুটিতে সিগন্যাল সিস্টেম এবং সেন্সর স্থাপন করা হয়েছে। ঝোড়ো বাতাস বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে সেতু দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।

এছাড়া, এই সেতু দুটি নির্মাণে ফিনল্যান্ড, জার্মানি এবং ইতালির সংস্থাগুলির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে সেতুর নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে এই অঞ্চলে রেল যোগাযোগ আরও নিরাপদ এবং দ্রুত করা সম্ভব হবে।

নতুন প্রযুক্তি, নতুন সম্ভাবনা

জম্মু-কাশ্মীরের মতো দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে রেল যোগাযোগ উন্নত করতে এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেতু দুটির নির্মাণের মাধ্যমে ভারতের রেল ব্যবস্থা শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সেতুর স্থায়ীত্ব এবং নিরাপত্তা বজায় রাখতে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও উন্নত রেল পরিষেবা নিশ্চিত করবে।

এই প্রকল্পটি শুধু রেল চলাচলকে সহজতর করবে না, বরং ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরবে।

Read more

Local News