সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে আনন্দের রং!
আমতলা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনে এক দিনের জন্য হলেও রঙিন স্বপ্ন বুনে দিল ‘গ্লোবসিন বিজনেস স্কুল’ ও ‘গ্লোবসিন নলেজ ক্যাম্পাস’। ‘কল্যাণী ইউথ লিডারশিপ ফোরাম’-এর ‘বিয়ন্ড এডুকেশন’ উদ্যোগের অংশ হিসাবে আয়োজিত হল আন্তঃস্কুল কার্নিভাল— ‘কল্যাণী আনন্দ উৎসব ২০২৫’। দশম বছরে পদার্পণ করা এই উৎসব এবার নতুন মাত্রা পেল— অংশগ্রহণ করল ৮০০-রও বেশি শিশু, তাঁদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
শুধু আনন্দ নয়, দিনভর উৎসবের প্রতিটি পর্ব জুড়েই ছিল সৃজনশীলতা, উৎসাহ, মানবিকতা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার বার্তা। এই অনন্য উদ্যোগটি যেমন শিশুদের কল্পনাশক্তি বিকশিত করেছে, তেমনই বিভিন্ন সম্প্রদায় ও পরিবারের মধ্যে গড়ে তুলেছে সৌহার্দ্যের সেতুবন্ধন।
উৎসবের শুভ সূচনা— আলোর মশালে পথ দেখানো
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। উপস্থিত ছিলেন গ্লোবসিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বিক্রম দাশগুপ্ত, ‘কল্যাণী – বিক্রম দাশগুপ্ত ফাউন্ডেশন’-এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি রঞ্জনা দাশগুপ্ত, গ্লোবসিন গ্রুপের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আর. সি. ভট্টাচার্য, জিবিএস-এর প্রধান অভিষেক কুমার— এবং প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
জিবিএস-এর শিক্ষার্থীরা হাত ধরে শিশুদের ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন— যেন উৎসবের শুরুতেই বড়দের সঙ্গে ছোটদের মেলবন্ধনের এক অনন্য ছবি।
সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন— এ বছরের বিশেষ থিম
এ বার উৎসবের মূল থিম ছিল— ‘গ্রিন আর্থ, ক্লিন আর্থ’। জাতিসংঘের স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য ১৫—‘লাইফ অন ল্যান্ড’-এর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই থিমের লক্ষ্য, শিশুদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলা এবং একটি স্বপ্নময় সবুজ ভবিষ্যতের চিত্র তাদের মনে আঁকা।
প্রতিযোগিতা, আনন্দ আর শৈশবের উৎসব
পুরো দিন জুড়ে নানা আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল শিশুদের জন্য—
- বসে আঁকো প্রতিযোগিতা— রংপেন্সিলে নিজেদের কল্পনা তুলে ধরল ছোট্ট শিল্পীরা।
- আবৃত্তি— মঞ্চ ভরে উঠল শিশুদের কণ্ঠে কবিতার ছন্দে।
- ম্যাজিক শো— চোখ ধাঁধানো জাদুতে মুগ্ধ হয়ে রইল শিশুরা।
- শঙ্খধ্বনি ও হাঁড়িভাঙা প্রতিযোগিতা— অংশ নিলেন অভিভাবকরাও, জমে উঠল পরিবার-সহ সমাজের সম্মিলিত অংশগ্রহণ।
এই বছর অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ সম্মানিত অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র, যিনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিচারকের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর উপস্থিতি উৎসবের উচ্ছ্বাস আরও বাড়িয়েছে।
মানবিকতার বার্তা— বিক্রম দাশগুপ্তের উদ্যোগ
গ্লোবসিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম দাশগুপ্ত নিজে উপস্থিত থেকে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের স্বপ্ন, আনন্দ— সবকিছু শুনে উৎসাহিত করেন। শিশু-শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে তাঁর এই ঘনিষ্ঠ যোগসূত্রই এই উদ্যোগকে আরও মানবিক করে তোলে।
পুরস্কার বিতরণী— সাফল্য ও সাম্প্রদায়িকতার উদ্যাপন
দিন শেষে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সেরা প্রতিযোগীরা হাতে পান পুরস্কার ও স্মারক। পুরস্কার বিতরণ করেন অধ্যাপক আর. সি. ভট্টাচার্য, সঙ্গে ছিলেন জিবিএস-এর প্রিন্সিপাল অধ্যাপক অভিষেক কুমার এবং খ্যাতনামা ফুটবলার রঞ্জন দে।
এই উৎসব শুধু প্রতিযোগিতা নয়— এটি ছিল ভালোবাসা, একতা ও মানবিকতার উদ্যাপন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করে ‘কল্যাণী আনন্দ উৎসব ২০২৫’ প্রমাণ করল— শিক্ষা মানে শুধু বই নয়, সমাজ ও মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতাও।

