Wednesday, January 29, 2025

সুচিরের রহস্যজনক মৃত্যু: প্রযুক্তি দুনিয়ায় নতুন প্রশ্ন

Share

সুচিরের রহস্যজনক মৃত্যু!

ভারতীয় বংশোদ্ভূত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক সুচির বালাজির আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে রহস্য আরও গভীর হচ্ছে। চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা সংস্থা ওপেনএআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২৬ বছর বয়সি এই এআই বিশেষজ্ঞ। তবে সংস্থা ছাড়ার পর তিনি ওপেনএআই-এর কার্যপদ্ধতি এবং নৈতিকতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

আত্মহত্যা নাকি খুন?

২০২৫ সালের ২৬ নভেম্বর, সান ফ্রান্সিসকোর বুচানন স্ট্রিটের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে সুচিরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, সুচিরের বাবা-মা এই দাবিকে অস্বীকার করেছেন। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন এবং শরীরে ধস্তাধস্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুচিরের মা পূর্ণিমা রাও সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে যা উঠে এসেছে, তা স্পষ্টতই খুনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।’’

সুচিরের

কী জানতেন সুচির?

পূর্ণিমা রাওয়ের দাবি, সুচির ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সাক্ষী হওয়ার কথা ছিল। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ তাঁর সাক্ষ্যকে ভিত্তি করে একটি মামলা পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিল। তাঁর কাছে এমন কিছু নথি এবং তথ্য ছিল যা প্রকাশিত হলে ওপেনএআই এবং মাইক্রোসফ্‌টের মতো সংস্থাগুলোর জন্য বিপজ্জনক হতে পারত। সুচিরের মা বলেন, ‘‘ওর সাক্ষ্য দিলে এআই শিল্পে বড়সড় প্রভাব পড়ত।’’

ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ

সুচিরের ওপেনএআই থেকে পদত্যাগের পর, তিনি সংস্থাটির বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর মতে, ওপেনএআই-এর এআই মডেলগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কপিরাইট থাকা ডেটার অবৈধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলি কেবল কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করছে না, বরং মানবতার জন্যও ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সুচির। বিশেষ করে, এলএলএম (ল্যাংগুয়েজ লার্নিং মডেল) মডেল নিয়ে তিনি বলেছিলেন, এটি মানুষের ভাষা শোনে, বোঝে এবং তৈরি করে, তবে এর মধ্যে নৈতিকতার অভাব রয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ

সুচিরের বাবা-মা জানিয়েছেন, তিনি অনুভব করতে শুরু করেছিলেন যে তাঁর কাজের অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং কোনও নীতি না মেনেই এগুলি পরিচালিত হচ্ছে। তাঁর মা পূর্ণিমার বক্তব্য, ‘‘সুচির নৈতিকতার পক্ষে ছিল। এই নৈতিকতাই তার জীবন কেড়ে নিয়েছে।’’

মৃত্যুর আগের মুহূর্ত

সুচিরের বাবা রামামূর্তি জানিয়েছেন, মৃত্যুর ঠিক আগে সুচির তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করে ফিরছিলেন। তিনি বেশ হাসিখুশি ছিলেন এবং জানুয়ারিতে লস অ্যাঞ্জেলসে ফেরার পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁর আচরণে আত্মহত্যার কোনো ইঙ্গিত ছিল না।

পুলিশের বিবৃতি ও প্রশ্ন

স্যান ফ্রান্সিসকো পুলিশের মতে, সুচির আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। যদি আত্মহত্যার তত্ত্ব সঠিক হয়, তবে কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যা তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিল? আবার, যদি তিনি খুন হন, তবে কারা এর পেছনে এবং কেন?

‘হুইসেলব্লোয়ার’ নাকি নীতিবাদী?

সুচিরের মা দাবি করেছেন, তিনি কখনোই ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তোলেননি। তবে তিনি এআই মডেলের ক্ষতিকারক দিকগুলি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। ‘‘সুচির ‘হুইসেলব্লোয়ার’ ছিল না। সে নীতিবাদী ছিল,’’ বলেছেন তাঁর মা।

ভবিষ্যতের প্রশ্ন

সুচিরের মৃত্যু প্রযুক্তি জগতের জন্য এক বড় ধাক্কা। এআই প্রযুক্তির কার্যপদ্ধতি এবং নৈতিকতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন তিনি তুলেছিলেন, সেগুলি এখন আরও জোরালোভাবে আলোচনায় উঠে আসছে। তাঁর মৃত্যু কি এআই প্রযুক্তির ‘অন্ধকার দিক’ প্রকাশের কারণে হয়েছে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে হয়তো আরও তদন্ত প্রয়োজন।

সুচিরের পরিবার ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তাঁর মৃত্যু এআই শিল্পের ভবিষ্যৎ নৈতিকতার দিকে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।

রেললাইনে বসে গেম খেলতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু: পাবজি নিয়ে মৃত্যু তিন কিশোরের

Read more

Local News