Wednesday, February 12, 2025

সিপিএমে বাড়ছে আয় গোপনের প্রবণতা: শহরাঞ্চলেই সমস্যার কেন্দ্রীভূত

Share

সিপিএমে বাড়ছে আয় গোপনের প্রবণতা

সিপিএমের দলীয় সদস্যদের মধ্যে আয় গোপন করার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি বছর সদস্যপদ পুনর্নবীকরণের সময় প্রত্যেক সদস্যকে নিজের আয়ের হিসাব দিয়ে নির্দিষ্ট হারে ‘লেভি’ প্রদান করতে হয়। তবে, দলের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় উঠে এসেছে যে, অনেক সদস্য তাদের প্রকৃত আয় দলকে জানাচ্ছেন না। এর ফলে, আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে দলের। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রেও নিরুপায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

শহর বনাম গ্রাম: প্রবণতার ভিন্নতা

সিপিএমের বিভিন্ন স্তরের সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে যে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে দলীয় সদস্যদের মধ্যে আয় গোপন করার প্রবণতা অনেক বেশি। শহরাঞ্চলের সদস্যদের একটি বড় অংশ, যারা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন বা ব্যবসায় যুক্ত, তাদের প্রকৃত আয় দলকে জানাচ্ছেন না। সরকারি চাকরিজীবীরাও এই তালিকায় রয়েছেন, যদিও তাঁদের ক্ষেত্রে আয় গোপনের ধরন ভিন্ন।

গ্রামাঞ্চলে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। সিপিএম নেতৃত্বের মতে, গ্রামের ক্ষেতমজুর বা ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করা সদস্যদের আয়ের পরিমাণ কম। ফলে, তাঁদের লেভি দেওয়ার চাপও কম। মাসে ২০-৩০ টাকা দেওয়ার জন্য তাঁদের বিশেষ অসুবিধা হয় না। কিন্তু শহরাঞ্চলে একজন সদস্যের মাসিক লেভি হতে পারে ১৫০০-২০০০ টাকা। এই উচ্চ পরিমাণই অনেককে আয় গোপন করতে উৎসাহিত করছে।

আয় গোপনের ধরন এবং কারণ

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর, বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আয়ের গোপনীয়তা সবচেয়ে বেশি। যাঁরা শিক্ষাকতা বা অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা মূল বেতন দলকে জানালেও প্রাইভেট টিউশনের আয় গোপন করেন। তবে, হাতে গোনা কিছু সদস্য রয়েছেন, যারা নিজেদের ‘পে স্লিপ’ দেখিয়ে লেভি প্রদান করেন এবং বেতন বৃদ্ধির পর তা দলকে জানিয়ে বাড়তি লেভি দেন।

শহরাঞ্চলের আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো জীবনযাত্রার ব্যয়। এক প্রবীণ নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, এক তরুণ হয়তো দিনের বেলা একটি চাকরি করছেন এবং রাতে উবের বা র‌্যাপিডো বাইক চালিয়ে আয় বাড়াচ্ছেন। তাঁর এই অতিরিক্ত আয়ের ক্ষেত্রে সহানুভূতির দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। এ ধরনের সদস্যদের ওপর লেভি আরোপের আগে তাঁদের পরিস্থিতি বুঝতে হবে।

দলের আর্থিক ক্ষতি এবং দোদুল্যমানতা

আয় গোপনের ফলে সিপিএম আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু দলের নেতৃত্ব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধায় রয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আয়ের সঠিক হিসাব না দিলে সদস্যপদ বাতিল করার বিধান আছে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া সহজ নয়। ভোটে দুর্বল দল সংগঠন ধরে রাখার চেষ্টায় আপস করছে।

দলের এক প্রবীণ নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, “কঠোর পদক্ষেপ নিলে সদস্যপদ হারাতে পারে অনেকেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের পদক্ষেপ সাংগঠনিক কাঠামোর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”

সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা

আয় গোপনের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে সিপিএম নেতৃত্ব বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করছে। কিছু প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে:

  1. সদস্যদের আয়ের বৈধতা নিয়ে স্বচ্ছতা আনতে প্রচার চালানো।
  2. লেভি প্রদানের ক্ষেত্রে সহানুভূতির ভিত্তিতে ভিন্ন নীতি তৈরি করা।
  3. আয় যাচাই করার নতুন পদ্ধতি চালু করা।

তবে, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দলকে নানান বাধার মুখোমুখি হতে হবে। সদস্যদের আয়ের প্রকৃত চিত্র জানতে গেলে তাদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা দলের সাংগঠনিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ভবিষ্যৎ দিশা

সিপিএমের আর্থিক কাঠামো টিকিয়ে রাখতে আয় গোপনের প্রবণতা রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। তবে, সদস্যদের উপর বাড়তি চাপ না দিয়ে সহনীয় নীতি প্রয়োগের প্রয়োজন। বিশেষত, শহরাঞ্চলে যারা বেশি আয় করেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করতে হবে। দলের আর্থিক স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন নেতৃত্বের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

Read more

Local News