সিপিএমে নতুন বিতর্ক!
সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে সদ্য জায়গা পাওয়া এক তরুণ নেতাকে ঘিরে এখন রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য। যখন তিনি মাদুরাইয়ে পার্টি কংগ্রেসে ব্যস্ত, তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাঁর কিছু ছবি। যা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে বাম শিবির।
কী নিয়ে বিতর্ক?
এই তরুণ নেতা কলকাতার ভূমিপুত্র নন, কিন্তু ছাত্র রাজনীতি এবং যুব আন্দোলনের মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন। বিশেষ করে, শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের প্রতিবাদ এবং চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার, যখন ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের রায়ে উত্তাল রাজ্য, তখনই তাঁর কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ছবিগুলো নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপিও।
বিজেপির তীর্যক মন্তব্য
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে লেখেন,
“দলের সবাই কি সুশান্ত ঘোষ?”
এই পোস্টের মাধ্যমে তিনি সিপিএমেরই এক প্রাক্তন নেতার দিকে ইঙ্গিত করেন, যিনি কিছুদিন আগে এক বিতর্কিত ঘটনায় দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিলেন।
পরবর্তীতে বিজেপি নেতা বলেন,
“যাঁদের আমি ভদ্রলোক মনে করতাম, তাঁদের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বিষয়টি ভিন্ন। যদি এই ছবিগুলি মিথ্যা হয়, তাহলে তাঁর আইনি সাহায্য নেওয়া উচিত।”
সিপিএম কী বলছে?
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য এই ঘটনাকে “নজর ঘোরানোর চেষ্টা” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য,
“বিজেপি এখন এই ধরনের কৌশল নিয়েছে। তবে দলের ভেতরে কোনও অভিযোগ এলে, দল সেটি গুরুত্ব দিয়েই দেখবে।”
তবে আলিমুদ্দিনের অন্দরমহলে বিষয়টি নিয়ে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছে সিপিএমের একাধিক নেতা
এই ঘটনা এমন এক সময়ে সামনে এসেছে, যখন সিপিএম ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে।
- প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ-কে মহিলাসংক্রান্ত এক অভিযোগের কারণে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
- উত্তর দমদমের প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য-কে এক মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগে ছয় মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে।
এখন নতুন করে এই তরুণ নেতার ছবি ভাইরাল হওয়ায় সিপিএমের জন্য আরও বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে।
দলের অভ্যন্তরে কী হচ্ছে?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে,
- এক তরুণী আনুষ্ঠানিকভাবে ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন।
- অভিযোগের কপি কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কাছেও গিয়েছে।
- তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ভাইরাল ছবির নায়ক কী বলছেন?
যখন সংশ্লিষ্ট নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন,
“আমি এই বিষয়ে কিছু বলব না।”
এই মন্তব্য আরও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। তিনি কেন চুপ? যদি তিনি নির্দোষ হন, তবে কেন পাল্টা জবাব দিচ্ছেন না?
রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকদের মতে,
👉 সিপিএম যদি এই বিতর্কের সঠিক জবাব না দেয়, তাহলে বিজেপি এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে বামেদের উপর আরও চাপ বাড়াবে।
👉 যদি অভিযোগ সত্যি হয়, তাহলে দল আবারও কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
বর্তমানে সিপিএম একদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালাচ্ছে, অন্যদিকে দলের ভেতরে এই ধরনের বিতর্ক দানা বাঁধছে।
এখন দেখার বিষয়, এই তরুণ নেতার ভবিষ্যৎ কী হয় এবং সিপিএম কী সিদ্ধান্ত নেয়!
চাকরি বাতিলের ধাক্কায় শিক্ষক সঙ্কট, রাজ্যের স্কুলগুলিতে অনিশ্চয়তা