Monday, December 1, 2025

সাদা খাতা জমা দিয়েও পাশ! কোটি টাকার দুর্নীতির কাহিনি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের

Share

টাকার দুর্নীতির কাহিনি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের!

সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় এক অবিশ্বাস্য দুর্নীতির পর্দাফাঁস করেছে সিবিআই। পরীক্ষার্থীদের সাদা খাতা জমা দিতেও বলা হয়েছিল, আর তাতেও তাঁরা পাশ করেছেন! তবে এই পাসের জন্য তাঁদের গুনতে হয়েছে মোটা অঙ্কের ঘুষ।

ঘুষের লেনদেনের ডায়েরি

সিবিআইয়ের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে চারজন এজেন্টের নাম— শেখ আব্দুল সালাম, বকুল বিশ্বাস, রৌসন আলম ওরফে মিলন এবং তৃস্তান মান্না। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১০টি ডায়েরি, যেখানে ঘুষের সম্পূর্ণ হিসাব লিপিবদ্ধ ছিল। এসব টাকা পৌঁছে যেত অরুণ কুমার হাজরা ওরফে চিনু হাজরা এবং সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র হাতে।

ঘুষ আদায়ের পদ্ধতি

এই এজেন্টরা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে অরুণ হাজরার কাছে পৌঁছে দিতেন, যেখান থেকে তা যেত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে। এসব লেনদেনের প্রমাণ রয়েছে ডায়েরিগুলোতে, যেখানে সুজয়কৃষ্ণের বাড়ি, ‘বেহালা উত্তরসূরি’ ক্লাব এবং ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ অফিসের নাম পাওয়া গিয়েছে। সুজয়কৃষ্ণ কখনো নিজে, কখনো তাঁর কর্মচারী নিখিল হাতির মাধ্যমে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করতেন।

সাদা খাতা জমার নির্দেশ

সিবিআইয়ের তথ্যানুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরের সালাম জানান, তিনি উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন। তাঁকে বলা হয় যে, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তাঁকে কিছুই লিখতে হবে না— শুধু সাদা ওএমআর শিট জমা দিলেই হবে। ঘুষের টাকা পরীক্ষার পরে দিতে হবে। এভাবেই অনেক পরীক্ষার্থী সাদা খাতা জমা দিয়েও পাশ করেছেন।

প্রার্থী জোগাড় করে কমিশন

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রতিটি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। এরপর তাঁদের আরও প্রার্থী জোগাড় করতে বলা হয়, যাতে তাদের কাছ থেকে কমিশন বাবদ টাকা তোলা সম্ভব হয়। সালামও সেই পথে হেঁটে অন্যান্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছিলেন।

প্রতারিত প্রার্থীদের চাপ

কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত হয় যখন অধিকাংশ চাকরি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন অরুণ ও সুজয়কৃষ্ণ। প্রার্থীরা যখন টাকা ফেরত চাইতে শুরু করেন, তখন ৩৭ কাঠার একটি জমি বিক্রি করে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

সাদা খাতায় ১২৫ নম্বর!

তৃস্তান মান্নার স্ত্রীকেও পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবুও তিনি ১২৫ নম্বর পেয়েছিলেন! এই ঘটনায় অরুণের প্রতি বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয় তৃস্তানের। তিনিও ঘুষের হিসাব একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতেন, যাতে অরুণের স্বাক্ষর থাকত।

তদন্ত ও বর্তমান পরিস্থিতি

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র গ্রেফতার হলেও বর্তমানে অন্তর্বর্তী জামিনে রয়েছেন। সিবিআই তদন্তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও উঠে এসেছে, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অভিষেক দাবি করেছেন, সিবিআই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর নাম জড়িয়েছে।

এই দুর্নীতি প্রমাণ করে, কত সুসংগঠিতভাবে সরকারি চাকরি বাণিজ্য চলছিল। চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলার ঘটনা সমাজের প্রতি গভীর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।

ভারতের উপর পাল্টা শুল্ক চাপাচ্ছেন ট্রাম্প! ঘোষণা করলেন নির্দিষ্ট তারিখও

Read more

Local News