সাত মাসের শিশুকন্যার উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
কলকাতার বড়তলা থানা এলাকার ফুটপাথে সাত মাসের এক শিশুকন্যার উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। শিশুটিকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, এবং পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় অপরাধীকে খুঁজে বের করতে মরিয়া প্রশাসন।
ফুটপাথে শিশুর আর্তনাদ
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফুটপাথে শুয়ে কাঁদছিল সাত মাসের শিশুকন্যাটি। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন এবং যৌনাঙ্গে ক্ষতের উপস্থিতি ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি দেখে পুলিশে খবর দেন। শিশুটিকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়, যেখানে প্রাথমিক পরীক্ষায় যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মেলে।
শিশুটির নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সকালে ফুটপাত-নিবাসী এক দম্পতি তাদের সাত মাসের শিশুকন্যা নিখোঁজ হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটিকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে যেখানে পাওয়া যায়, তার বাড়ি ওই স্থান থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে। খবর পেয়ে শিশুটির বাবা-মা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং মেয়েকে শনাক্ত করেন।
চিকিৎসা চলছে, অবস্থা আশঙ্কাজনক
শিশুটির শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শিশুটির শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক।
পুলিশের তদন্ত ও মামলা
এই নৃশংস ঘটনায় শিশুটির মা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৩৭(২), ৬৫(২), এবং শিশু সুরক্ষা আইন (পকসো)-এর ৬ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, অপরাধীর সন্ধানে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখনও অভিযুক্তের পরিচয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
অপরাধী শনাক্তের চেষ্টা
পুলিশ এই ঘটনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছে। ফুটপাথে যাতায়াতকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের ওপর নজরদারি চলছে। পুলিশের একটি বিশেষ দল এই ঘটনার দ্রুত সমাধানের জন্য গঠন করা হয়েছে। অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে টেকনোলজির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে।
জনমনে ক্ষোভ
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারা অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। শিশু সুরক্ষা এবং ফুটপাথবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। একাধিক সমাজসেবী সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং শিশুটির পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে।
শিশু সুরক্ষার দিকে নজর
এই ঘটনায় আরও একবার ফুটপাথে বসবাসকারী শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দারিদ্র্যপীড়িত এই পরিবারগুলো শুধুমাত্র নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করে না, তাদের শিশুরাও প্রতিনিয়ত নানা ধরণের হুমকির সম্মুখীন হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা রোধে সরকার এবং সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
উপসংহার
সাত মাসের একটি শিশুর উপর এই ধরনের নৃশংসতা সমাজের মানবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অপরাধীর দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি একান্ত প্রয়োজন। একইসঙ্গে, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শিশুদের সুরক্ষার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

