সাগরে গভীর নিম্নচাপ
পৌষ মাস মানেই শীতের কামড়, কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া ভোর আর কম্বলের উষ্ণতা। কিন্তু ২০২৪-এর পৌষ মাস যেন একটু অন্য রকম। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ এবং পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে দক্ষিণবঙ্গে শীতের প্রকোপ কমেছে। তার সঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন
শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি শনিবার সারা দিন ধরেই চলেছে কলকাতা ও শহরতলিতে। এর ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে উপরে উঠে গিয়েছে। শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৩ ডিগ্রি বেশি।
বৃষ্টি থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ উঠলেও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে শীতের প্রকোপ খুব বেশি থাকবে না। বড়দিনের দিনে জাঁকিয়ে ঠান্ডার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাব
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ক্রমে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। যদিও হাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার থেকে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নিম্নচাপ ধীরে ধীরে সমুদ্রেই শক্তি হারাবে এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাবে।
এই পরিস্থিতিতে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের গভীর অঞ্চলে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছে। রবিবারের পর সমুদ্র পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া এবং কুয়াশার সতর্কতা
উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন নেই। দার্জিলিং ছাড়া অন্য কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে দার্জিলিঙে হালকা বৃষ্টি এবং তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই ঘন কুয়াশার সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। দৃশ্যমানতা কমে যেতে পারে ১৯৯ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত। কুয়াশার কারণে যানবাহনের গতিও প্রভাবিত হতে পারে।
তাপমাত্রার ওঠানামা: শীতের আমেজে ঘাটতি
শনিবারের তুলনায় রবিবার তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও বড়দিনের সময়ে ফের পারদ চড়তে পারে। দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা আগামী ২৪ ঘণ্টায় ২-৩ ডিগ্রি কমতে পারে। তবে তার পরে আবার তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাপমাত্রার এই ওঠানামার ফলে শীতের প্রকৃত অনুভূতি পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বড়দিনের সময় যেখানে মানুষ ঠান্ডার আমেজে উৎসব উদ্যাপনের অপেক্ষায় থাকে, সেখানে এই পরিস্থিতি অনেকেরই মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বড়দিনে কী আশা করা যায়?
কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের মানুষের কাছে বড়দিনের শীত মানেই উৎসবের একটি বড় অংশ। কিন্তু এ বারের বড়দিনে তেমন জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি না হলেও, হালকা ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে আকাশ পরিষ্কার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে উত্তরবঙ্গে যারা বড়দিনের ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য দার্জিলিঙে তুষারপাতের সম্ভাবনা একটি বাড়তি আনন্দ হতে পারে।
শেষ কথা
আবহাওয়ার এই পরিবর্তন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। নিম্নচাপ কিংবা ঝঞ্ঝার কারণে শীতের স্বাভাবিক প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটলেও এই সময়টাকে উপভোগ করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বড়দিনের উৎসব, ঠান্ডা হাওয়া আর প্রকৃতির রূপ বদলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমরা এই সময়কে আরও সুন্দর করে তুলতে পারি।
শীতের ঘাটতি থাকলেও বড়দিনে উৎসবের উষ্ণতা যেন আমাদের মনে থেকে যায়।

