সাইবার জালিয়াতি
সাইবার অপরাধ এবং ডিজিটাল প্রতারণা রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। ৫৯,০০০ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট এবং ১,৭০০টিরও বেশি স্কাইপ অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে বন্ধ করেছে ভারতের সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (আইফোরসি)। এই তথ্য লোকসভায় জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বান্দি সঞ্জয় কুমার।
সাইবার জালিয়াতি রোধে কেন্দ্রের উদ্যোগ
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে ২০২১ সালে ‘সিটিজেন ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড রিপোর্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে কেন্দ্র। এর মাধ্যমে আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ জানানো অনেক সহজ হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয়ের মতে, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ৯.৯৪ লক্ষ অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় ৩,৪৩১ কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতারণামূলক কাজ পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত একাধিক সিমকার্ডও বন্ধ করা হয়েছে। চলতি বছর ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৬ লক্ষ ৬৯ হাজার সিমকার্ড বন্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলিকে চিহ্নিত করে ব্লক করার কাজও চলছে।
কীভাবে জালিয়াতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার শাখার সহযোগিতায় বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সাইবার জালিয়াতদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ একটি নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে এই তালিকায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম খুঁজে দেখতে পারেন। এর ফলে প্রতারণার ঘটনা আগেভাগেই এড়ানো সম্ভব।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ডিজিটাল জালিয়াতি বিষয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন। তিনি বলেন, “ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। ফোন কল বা স্ক্রিন রেকর্ড করে তথ্য সংরক্ষণ করা উচিত। দ্রুত ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইন ১৯৩০-এ এবং স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।”
সাইবার জালিয়াতির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান
ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল (এনসিআরপি)-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৭.৪ লক্ষ অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ১২০ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার ডিজিটাল প্রতারণার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। লগ্নির টোপ দিয়ে আরও ২২২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে সাইবার জালিয়াতির মোট অভিযোগের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ১৫ লক্ষ। প্রতারণার কৌশল প্রতিনিয়ত নতুন আকার নিচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়াতে এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সরকার নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছে। সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা, সিমকার্ড বন্ধ করা এবং অর্থ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকার আশা করছে, সাধারণ মানুষ আরও বেশি সচেতন হলে সাইবার অপরাধীদের কার্যকলাপ সীমিত হবে।
সাইবার নিরাপত্তার জন্য করণীয়
১. সন্দেহজনক ফোন কল বা বার্তায় কোনও ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
২. প্রতারণার শিকার হলে ১৯৩০ নম্বরে ফোন করে ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনে অভিযোগ জানান।
৩. স্ক্রিনশট বা রেকর্ডিং রেখে প্রমাণ সংগ্রহ করুন।
৪. স্থানীয় থানায় দ্রুত অভিযোগ দায়ের করুন।
৫. নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ডিজিটাল ওয়ালেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
সাইবার জালিয়াতি প্রতিরোধে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জন্য সুরক্ষার নতুন দিশা তৈরি করেছে। সরকারের এসব উদ্যোগ সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে। তবে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা এবং সচেতনতা অপরিহার্য।