Saturday, February 8, 2025

সরস্বতী পুজো: বিদ্যার দেবী ও প্রেমের স্নেহময় সান্নিধ্য

Share

সরস্বতী পুজো

“দুষ্টু সরস্বতী আমার মাথায় সব সময় বিরাজ করেন। সেই জোরেই পুজোর আগে কুল খেয়েছি। দেবীর দাক্ষিণ্যেই আমার জীবনে প্রেমের আনাগোনা।”

এ কথাগুলি বলেছিলেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য, যিনি দেবী সরস্বতীকে শুধু বিদ্যার দেবী হিসেবে নয়, প্রেমের দেবী হিসেবেও দেখেন। সরস্বতী পুজো একদিকে যেখানে বিদ্যার আরাধনা, সেখানে অন্যদিকে বাঙালি সমাজের মন-মুখ উন্মুক্ত করার একটি দিন।

ছোটবেলায় সরস্বতী পুজো ছিল এক মজার দিন। দুর্গাপুজো থেকে দীপাবলি পর্যন্ত সব পুজোই কাটত মা-বাবার সঙ্গে, কিন্তু সরস্বতী পুজো ছিল এমন একদিন যখন পাড়ার পুজোতে অংশ নেওয়ার স্বাধীনতা মিলত। পুজোর দিন সবার জন্য এক উৎসবের দিন— চাঁদা চাওয়া, পুজোর বাজার করা, মেলায় বেরোনো, এবং হঠাৎ করেই কেউ কেউ ঠাকুর আনতে যেতে পারত।

অম্বরীশ ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে একরকম কল্পনা— তাঁর কাছে সরস্বতী পুজো ছিল শুধু বিদ্যা এবং শিক্ষা নয়, প্রেমের প্রতীকও। ছোটবেলায় পুজোর আগের দিন কুল খাওয়া, তার পর পুজোয় বসে থাকা, স্নান করে হলুদ শাড়িতে সাজতে থাকা, এবং সবার চোখে দেবী সরস্বতীর প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল। এটি ছিল প্রেম এবং স্নেহের উজ্জ্বল প্রকাশ, যেহেতু এই দিনে মেয়েরা বাসন্তী শাড়িতে সাজে, এবং তা ছেলেদের কাছে এক বিশেষ রূপে ধরা দেয়।

একটি বিশেষ বিষয় ছিল, যে সময়ের পর, যখন তিনি বড় হতে শুরু করলেন, সরস্বতী পুজো তাঁর কাছে আরও রোমান্টিক হয়ে উঠেছিল। বাগদেবী বা দেবী সরস্বতীকে তাঁর চোখে একটা আলাদা আকর্ষণ দেখাল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘অর্ধেক জীবন’-এ যে দেবীপ্রতিমাকে প্রেয়সী হিসেবে দেখানো হয়েছিল, তা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। সাহিত্যিকের সেই ভাবনা তাকে জানিয়েছিল যে দেবীও প্রেমের দেবী হতে পারে, এবং তার সান্নিধ্য পেতে সেই প্রেমের শক্তি পাওয়া যেতে পারে।

অম্বরীশ আরো বলেন, “মেয়েদের লক্ষ্মীমন্ত হতে বলা হয়, যাতে সব সহ্য করে নেয়, সরস্বতীমন্ত হতে শেখায় না।” এই চিন্তাভাবনা থেকে বোঝা যায়, একদিকে বাঙালি সমাজ বিদ্যাকে সঙ্গী করে নারীকে সর্বশক্তিময় করে তোলে, অন্যদিকে তারা দেবী সরস্বতীকে মনে করেন কেবল বিদ্যার প্রতীক, প্রেমের প্রতীক নয়। যদিও পুরাণে দেবী সরস্বতীকে কামের দেবী হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে, বাঙালি সমাজের মধ্যবিত্ত মানসিকতার কারণে তিনি শুধু বিদ্যার দেবী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত।

মধ্যবিত্তের জন্য স্বস্তি, কিন্তু বড় শিল্পের জন্য নেই তেমন কিছু

Read more

Local News