কসবাকাণ্ডে গ্রেফতার মামা-মামি
কসবার হালতুতে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার হলো সোমনাথ রায়, তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা রায় এবং তাঁদের আড়াই বছরের শিশুপুত্রের নিথর দেহ। সুইসাইড নোটে লেখা কথাগুলোর সূত্র ধরে উঠছে এক ভয়ানক অভিযোগ—সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদই কি এই মর্মান্তিক পরিণতির কারণ?
মৃত্যুর মিছিল: কী ঘটেছিল সেদিন?
সোমনাথ ও সুমিত্রা, দু’জনেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁদের ছোট্ট শিশুপুত্রের নিথর দেহ বাঁধা ছিল বাবার শরীরের সঙ্গে। পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলা সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদই এই আত্মহননের পেছনে মূল কারণ। সোমনাথের মামা প্রদীপকুমার ঘোষাল ও মামি নীলিমা ঘোষালের বিরুদ্ধেই উঠেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।
অভিযোগের তীর মামা-মামির দিকে
মৃত সুমিত্রার বাবা বিশ্বনাথ ভৌমিক এবং দিদি সুপর্ণা ভৌমিক কসবা থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। একদিকে সুপর্ণা আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন সোমনাথের মামা-মামির বিরুদ্ধে, অন্যদিকে বিশ্বনাথ ভৌমিক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেন। প্রতিবেশীদের দাবি, অভিযুক্ত প্রদীপ ও নীলিমা কলকাতা পুলিশের চাকুরে। তাই তদন্ত প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
সম্পত্তির লড়াই নাকি আর্থিক অনটন?
সুমিত্রার পরিবারের দাবি, কয়েক বছর ধরে মামা-মামি তাঁদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছিলেন, সম্পত্তি ভাগ করে নেওয়ার জন্য। বিশ্বনাথ ভৌমিক জানান, ‘‘আমি বহুবার বলেছিলাম, জায়গা বিক্রি করে ভাড়া বাড়িতে চলে যেতে। কিন্তু ওরা শোনেনি।’’ তাঁর অভিযোগ, মামা-মামির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই শেষ পর্যন্ত এই পথ বেছে নিয়েছে দম্পতি।
তবে অন্য একটি তত্ত্বও উঠে আসছে। স্থানীয়দের একাংশের মতে, সোমনাথের আর্থিক অনটন ছিল প্রকট। পাওনাদারেরা প্রায়ই তাঁর বাড়িতে আসতেন টাকা চাইতে। এমনকি সুইসাইড নোটেও পাওনাদারের প্রসঙ্গ ছিল। তাই সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ নাকি ঋণের বোঝা—কোনটি এই আত্মহত্যার মূল কারণ, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গ্রেফতারির পর জল্পনা আরও তীব্র
সোমনাথের মৃত্যুর পরপরই মামা-মামিকে থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের আটক করা হয়, এবং পরে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করা হয়। এতে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে—তবে কি সত্যিই সম্পত্তি নিয়ে বিবাদই এই হৃদয়বিদারক ঘটনার মূলে? নাকি আর্থিক অনটনের কারণেই এই চরম সিদ্ধান্ত নিলেন সোমনাথ ও তাঁর স্ত্রী?
এই ঘটনায় কসবায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একমাত্র শিশুটিও শেষ পর্যন্ত রেহাই পেল না পারিবারিক দ্বন্দ্বের ভয়ানক পরিণতি থেকে। এখন পুলিশি তদন্তের উপরই নির্ভর করছে সত্য উদঘাটনের দিকনির্দেশ।
ইউক্রেনকে আর সামরিক সাহায্য নয়! ট্রাম্পের কড়া বার্তা, চাপে জেলেনস্কি