Thursday, April 10, 2025

সমুদ্রের বুক চিরে ‌মুম্বই থেকে দুবাই! মাত্র ২ ঘণ্টায় ছুটে চলবে ‘জলতলের বুলেট ট্রেন’

Share

সমুদ্রের বুক চিরে ‌মুম্বই থেকে দুবাই!

বিমানের থেকেও কম সময়ে ‌মুম্বই থেকে ‌দুবাই পৌঁছে যাওয়ার কল্পনা যদি আজ অবাস্তব মনে হয়, তাহলে সেই ধারণা এবার বদলাতে চলেছে। সমুদ্রের তলা দিয়ে ‌মুম্বই থেকে ‌দুবাই পর্যন্ত চলবে ‌এক উচ্চগতিসম্পন্ন ‌বুলেট ট্রেন। ভাবতে অবাক লাগলেও, বাস্তবের দরজায় কড়া নাড়ছে এই চমকপ্রদ প্রকল্প।

এই প্রস্তাবিত ‌ট্রেনটি ‌সমুদ্রের গভীর ‌অংশ দিয়ে ‌দৌড়াবে, যার ‌গতি হতে ‌পারে ঘণ্টায় ‌৬০০ থেকে ‌১০০০ কিলোমিটার। এর অর্থ, ‌আকাশপথে ‌যেখানে ‌মুম্বই থেকে ‌দুবাই যেতে ‌সময় লাগে ‌প্রায় তিন ঘণ্টা, ‌সেই যাত্রা ‌এই ‌সাবমেরিন ‌রেলের মাধ্যমে ‌শেষ হবে ‌মাত্র ‌দুই ঘণ্টায়!


‌এক নজরে ‌প্রকল্পের ‌পরিকল্পনা

এই ‌আধুনিক প্রকল্পের ‌প্রস্তাব ‌প্রথম ‌তোলা হয়েছিল ‌২০১৮ সালে ‌ভারত-আমিরশাহি ‌কনক্লেভে। সংযুক্ত ‌আরব ‌আমিরশাহির ‌ন্যাশনাল ‌অ্যাডভাইজ়ার ‌ব্যুরো ‌লিমিটেড ‌এই প্রকল্পের ‌মূল ‌পরিকল্পনাকারী। ‌তাদের ‌মতে, ‌মুম্বই থেকে ‌দুবাইয়ের ‌ফুজাইরাহ ‌পর্যন্ত ‌রেলপথটি ‌দুই হাজার ‌কিলোমিটার ‌দীর্ঘ ‌হতে ‌পারে। ‌এটি ‌সম্পূর্ণ ‌চলবে ‌জলের ‌তলার ‌মধ্যে দিয়ে, ‌যা ‌যাত্রীদের ‌জন্য ‌একটা ‌অভূতপূর্ব ‌ভ্রমণ ‌অভিজ্ঞতা ‌হবে।

এই ট্রেনটি ‌চলবে ‌ম্যাগলেভ ‌(ম্যাগনেটিক ‌লেভিটেশন) ‌প্রযুক্তিতে। ‌এর ‌মানে ‌হলো, ‌চৌম্বকীয় ‌বল ‌দিয়ে ‌ট্রেন ‌চলবে ‌লাইন ‌থেকে ‌উঠিয়ে, ‌যার ফলে ‌ঘর্ষণ ‌একেবারেই ‌থাকবে না ‌এবং ‌ভ্রমণ ‌হবে ‌অত্যন্ত ‌দ্রুত, ‌নিরব ‌এবং ‌আরামদায়ক।


‌শুধু ‌মানুষ নয়, ‌জল ‌ও ‌তেলও ‌পরিবহণ ‌হবে ‌এই পথে

এই ‌রেলপথ ‌শুধু ‌যাত্রী ‌পরিবহণের ‌জন্য ‌নয়। ‌রেলপথের ‌মাধ্যমে ‌ফুজাইরাহ ‌থেকে ‌অপরিশোধিত ‌তেল ‌ভারতে ‌আনা ‌হবে, ‌আবার ‌ভারতের ‌নর্মদা ‌নদীর ‌জল ‌পাঠানো ‌হবে ‌আমিরশাহিতে। ‌এই ‌ব্যবস্থা ‌চালু ‌হলে ‌দু’দেশের ‌বাণিজ্যিক ‌সম্পর্ক ‌নতুন ‌উচ্চতায় ‌পৌঁছাবে।

ভারত ‌যেখানে ‌প্রায় ‌৮৫% ‌তেল ‌আমদানি ‌করে ‌বিদেশ ‌থেকে, ‌সেখানে ‌এই ‌রেলপথ ‌তেল ‌আনতে ‌দ্রুততা ‌ও ‌কম ‌ব্যয় ‌নিশ্চিত ‌করবে। ‌সৌদি ‌আরব, ‌ইরাক, ‌ইরান, ‌কুয়েত, ‌কাতার ‌ও ‌আমিরশাহি ‌থেকে ‌তেল ‌আনার ‌প্রধান ‌পথ ‌হলো ‌হরমুজ ‌প্রণালী। ‌এই ‌নতুন ‌রেলপথ ‌সে ‌ব্যবস্থাকে ‌আরও ‌দৃঢ় ‌করবে।


‌ভবিষ্যতের ‌যান, ‌এখনও ‌স্বপ্নের ‌দুয়ারে

যদিও ‌এই ‌প্রকল্পের ‌বাস্তবায়ন ‌এখনও ‌শুরু ‌হয়নি, ‌তবে ‌বিভিন্ন ‌সমীক্ষা ‌ও ‌প্রযুক্তিগত ‌বিশ্লেষণ ‌চলছে ‌এই ‌সমুদ্রতল ‌রেলপথ ‌নিয়ে। ‌বিশেষজ্ঞদের ‌মতে, ‌এই ‌ধরনের ‌রেললাইন ‌তৈরির ‌জন্য ‌উচ্চ ‌কারিগরি ‌দক্ষতা ‌ও ‌হাজার হাজার ‌কোটি ‌টাকার ‌বিনিয়োগ ‌প্রয়োজন ‌হবে।

জাপান, ‌কোরিয়া, ‌কানাডা ‌ইত্যাদি ‌দেশে ‌ইতিমধ্যেই ‌ম্যাগলেভ ‌প্রযুক্তির ‌ট্রেন ‌চলছে। ‌ভারতের ‌জন্য ‌এটি ‌হবে ‌প্রথম ‌সামুদ্রিক ‌রেললাইন, ‌যা ‌বিশ্বমঞ্চে ‌ভারতকে ‌অন্য ‌এক ‌পর্যায়ে ‌নিয়ে ‌যাবে।


‌শেষ কথা

আজ ‌যা ‌ভাবনায় ‌অবিশ্বাস্য, ‌আগামীকাল ‌তা ‌হতে ‌পারে ‌বাস্তব। ‌সমুদ্রের ‌অন্তরালে ‌গড়ে ‌ওঠা ‌এই ‌’লৌহ ‌অজগর’ ‌শুধু ‌মুম্বই ‌ও ‌দুবাইয়ের ‌দূরত্ব ‌কমাবে ‌না, ‌বাড়িয়ে ‌তুলবে ‌দু’দেশের ‌সাম্প্রতিক ‌সম্পর্কের ‌উষ্ণতা। ‌সুযোগ ‌মিলবে ‌এক ‌নতুন ‌বিশ্বের ‌অভিজ্ঞতার, ‌যেখানে ‌সমুদ্রের ‌তলার ‌নীরবতায় ‌ছুটবে ‌এক ‌স্বপ্নের ‌ট্রেন।

ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!

Read more

Local News