তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব
কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই বিধায়ক অখিল গিরি এবং উত্তম বারিকের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পর শাসকদল তৃণমূলকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের এমন ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই বিধায়ককে সরাসরি ফোন করে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এ ধরনের আচরণ আর বরদাস্ত করা হবে না।
মঙ্গলবার রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি ও পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিকের অনুগামীদের মধ্যে ঝগড়া ও বচসার ঘটনা ঘটে। উত্তমের সমর্থকরা অখিলকে লক্ষ্য করে ‘চোর-চোর’ স্লোগান দেন। পাল্টা অখিল তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বোমা মেরে পাঁচ মিনিটে খতম করে দেব।’’ এই অশান্তির ফলে শাসকদলের সম্মানহানি হওয়ায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব দ্রুত হস্তক্ষেপ করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর বার্তা
বুধবার তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী কলকাতায় তাঁর দপ্তরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করেন। সেই বৈঠকের মধ্যেই ফোন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, তিনি নেতাদের উদ্দেশে স্পষ্ট নির্দেশ দেন, দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে এবং পারস্পরিক দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলের স্বার্থে কাজ করতে হবে।
দুই বিধায়কের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলেন মমতা। তাঁদের প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনাদের জন্য দলে অস্বস্তি কেন তৈরি হবে? আপনারা কীভাবে এমন আচরণ করতে পারেন যা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে?’’ মমতার রাগ ও কড়া মনোভাবের সামনে দুই বিধায়ক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী তাদের জানিয়ে দেন, দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মমতা আরও নির্দেশ দেন যে, কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী যে প্যানেল নির্ধারণ করবেন, সেটাই মেনে চলতে হবে। কেউ গোঁজ প্রার্থী দাঁড় করালে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।
পূর্বের সতর্কবার্তা এবং দলের নীতি
তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় শৃঙ্খলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। গত বছর কালীঘাটে অনুষ্ঠিত জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা ঘোষণা করেছিলেন যে, দলবিরোধী কাজের জন্য নেতাদের শোকজ করা হবে এবং তিনবার শোকজ হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। সেই নীতির কথা ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
সম্প্রতি দলবিরোধী কাজের জন্য প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন এবং প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। এ ঘটনাও দলের নেতাদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বার্তা দেয়।
নির্বাচনের পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে ১৫টি আসনের জন্য মোট ২৬টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। এর মধ্যে চারটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত হলেও বাকি ১১টি আসনে তৃণমূলের মধ্যেই প্রতিযোগিতা চলছে। মনোনয়ন জমার দিন যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্য পুলিশ প্রশাসন বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেছিল। তবুও সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি।
মমতার নির্দেশে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সক্রিয় হয়েছে। সুব্রত বক্সীকে বিশেষভাবে নজর রাখতে বলা হয়েছে যাতে কোনো রকম অশান্তি না হয়। ৩১ জানুয়ারি কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চূড়ান্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শেষ কথা
তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটাতে সক্রিয় হলেও, এই ঘটনা দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর মনোভাব দলীয় বিধায়কদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা যে, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এখন দেখার বিষয়, এই কড়া অবস্থানের পরে বিধায়ক অখিল গিরি এবং উত্তম বারিক কেমন আচরণ করেন এবং দলের মধ্যে শান্তি ফিরে আসে কি না।
‘আইআইটি বাবা’: সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে এক যুবা ইঞ্জিনিয়ারের যাত্রা