সঞ্জু স্যামসনের শতরানের রেকর্ড
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেও সঞ্জু স্যামসনকে বিদ্রুপের মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরপর দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শতরান করে নজির গড়লেও, তাঁর ধারাবাহিকতার অভাবে তাঁকে নিয়ে কটাক্ষ থামেনি। কেরলের এই ব্যাটসম্যান বহুদিন ধরে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের অভাবেই সমালোচিত হয়ে আসছেন, এবং রবিবার শূন্য রানে আউট হয়ে তিনি আবারও সেই সমালোচনার ইন্ধন জুগিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পরপর দুটি শতরানের রেকর্ড গড়ার পর, সঞ্জু তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে এমন কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। বিশ্বব্যাপী মাত্র চারজন ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পরপর দুটি শতরান করেছেন, সঞ্জু তাঁদের একজন। হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর শতরানের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে তিনি আবারও শতরান করেন, যা এশিয়ার কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যও বিরল ঘটনা।
কিন্তু সঞ্জুর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে ধারাবাহিকতা। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পরও এখনও তিনি ভারতীয় দলে স্থায়ীভাবে নিজের জায়গা নিশ্চিত করতে পারেননি। প্রায়ই তিনি দলে সুযোগ পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে পারেন না। চলতি বছরে তাঁর শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনাও কম নয়। এ বছর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এক বছরের মধ্যে চারবার শূন্য রানে আউট হওয়ার লজ্জাজনক রেকর্ড গড়েছেন তিনি, যা ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
সঞ্জুর জন্য সব সময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তার ভূমিকা এবং অবস্থান। ভারতীয় দলে ওপেনারের জায়গায় বহু প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছেন, যেমন রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল প্রমুখ। এই প্রতিযোগিতায় সঞ্জুর সুযোগ পেতে এবং সেটি ধরে রাখতে লড়াই করতে হচ্ছে। ওপেনার হিসেবে খেলে তিনি দুবার শতরান করলেও, এই পজিশন নিশ্চিত হওয়া তাঁর জন্য সহজ নয়।
বিশ্বকাপ ফাইনালের সময় একটি ঘটনা সঞ্জুর ক্রিকেটজীবনের জন্য শিক্ষা হয়ে আছে। ওই ম্যাচে তাঁকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা, যা সঞ্জুর জন্য হতাশাজনক ছিল। ম্যাচের আগে রোহিত তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছিলেন, কেন তাঁকে দলে রাখা হচ্ছে না, তা বোঝানোর জন্য। সঞ্জু সেদিন রোহিতকে বলেছিলেন, ‘‘একজন ক্রিকেটার হিসেবে এই ম্যাচে আমি খেলতে চাই, কিন্তু একজন নেতা হিসেবে তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।’’
সঞ্জুর মানসিকতা নিয়ে অনেক বিশ্লেষকও কথা বলেছেন। বাংলার প্রাক্তন উইকেটকিপার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সঞ্জুর টেকনিকের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, সঞ্জুর মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা কিছুটা হলেও কমে গিয়েছিল ধারাবাহিকভাবে দলে সুযোগ না পাওয়ার কারণে। তবে সঞ্জুর বর্তমান অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব তাঁকে যে ভরসা দিয়েছেন, তা তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শতরান করার পর সঞ্জু বলেছিলেন, ‘‘দলীপ ট্রফি খেলার সময় সূর্য আমার কাছে এসে জানিয়েছিল, পরবর্তী সাতটি ম্যাচে আমি খেলব, রান করি বা না করি, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। অধিনায়কের থেকে পাওয়া এই ভরসা আমার আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।’’
ভারতের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক সাবা করিমের মতে, সঞ্জুকে ধারাবাহিকভাবে দলে সুযোগ দেওয়া হলে তিনি ভালো পারফর্ম করতে পারেন। তাঁর মতে, টেকনিকগত কোনো সমস্যা নেই সঞ্জুর, সমস্যা শুধু মানসিক প্রস্তুতির অভাব। আইপিএলে সঞ্জু ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন, যা তাঁকে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা এনে দিয়েছে। সাবা করিম মনে করেন, ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করতে পারলে ভবিষ্যতে ওপেনারের জায়গাটি নিশ্চিত করতে পারবেন সঞ্জু।