সইফ আলি খান হামলা-কাণ্ড
মুম্বাই পুলিশের দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে বলিউড অভিনেতা সইফ আলি খানের ওপর হামলার মূল অভিযুক্তকে। রবিবার ভোরে মহারাষ্ট্রের ঠাণে এলাকা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ঘুমন্ত অবস্থায় আটক করে পুলিশ। অভিযানের সময় তার কাছ থেকে একটি ধারালো অস্ত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি
গত বুধবার গভীর রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় সইফ আলি খানের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। এরপর ওই ব্যক্তি অভিনেতার উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। ঘটনায় সইফের শরীরে ছ’টি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে দ্রুত লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার পর মুম্বাই পুলিশ প্রায় ৩০টি দল গঠন করে অভিযুক্তকে ধরতে তল্লাশি শুরু করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে তল্লাশি চালানো হয়। অবশেষে রবিবার সকালে ঠাণে এলাকার একটি ঝোপের মধ্যে অভিযুক্তকে আটক করা হয়।
গ্রেফতারের বিবরণ
মুম্বাই পুলিশের ডিসিপি পদমর্যাদার এক আধিকারিক জানান, অভিযুক্তকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে জঙ্গলের ঝোপঝাড়ের মধ্যে শুকনো ঘাস জড়ো করে শুয়ে ছিল। অভিযানের সময় তার কাছ থেকে একটি কাস্তে ধরনের ধারালো অস্ত্র এবং একটি তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি নিজের নাম বিজয় দাস বলে জানালেও পরে নিজেকে মহম্মদ সজ্জাদ নামে পরিচয় দেয়। এর ফলে তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
তদন্তের অগ্রগতি
ঘটনার দিন থেকেই পুলিশ তৎপর ছিল। সইফের বাড়ির পিছনের সিঁড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখা যায়। সেই ফুটেজ প্রকাশের পর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালায়।
প্রথমে এক কাঠমিস্ত্রিকে আটক করা হয়। পরে শনিবার জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস থেকে একজন এবং ছত্তিশগড়ের দুর্গ এলাকা থেকে আরও একজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। তবে মূল অভিযুক্তের সন্ধান মেলে ঠাণে এলাকায়।
অভিযুক্তের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা
পুলিশের দাবি, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি নিজেকে প্রথমে বিজয় দাস নামে পরিচয় দিলেও, পরে নিজের নাম মহম্মদ সজ্জাদ বলে জানায়। এই পরিচয় বিভ্রান্তি তাকে আরও সন্দেহের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। পুলিশের মতে, অভিযুক্ত হয়তো নিজের প্রকৃত পরিচয় আড়াল করার চেষ্টা করছে।
সইফের অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে সইফ আলি খান মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর আঘাত গুরুতর হলেও স্থিতিশীল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সইফ শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলে আবার কাজে ফিরবেন।
সইফের আগামী সিনেমা ‘জুয়েল থিফ’-এর শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল এই মাসেই। তবে চিকিৎসার কারণে তা কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে।
সমাজের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর বলিউড এবং সাধারণ মানুষ উভয়ই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন জনপ্রিয় অভিনেতার উপর এমন নৃশংস হামলা শুধু সইফের জন্য নয়, বরং গোটা বিনোদন জগতের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সইফের সহকর্মী এবং অনুরাগীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে শুভকামনা জানিয়েছেন। অনেকেই মুম্বাই পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
উপসংহার
সইফ আলি খানকে কেন্দ্র করে এই হামলা-কাণ্ড অনেক প্রশ্ন তুলে ধরেছে। একজন জনপ্রিয় তারকার বাড়ির নিরাপত্তায় এত বড় ফাঁক কেন ছিল, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে মুম্বাই পুলিশের তৎপরতায় অভিযুক্তের গ্রেফতার এই ঘটনায় একটি সাময়িক স্বস্তি এনে দিয়েছে।
অভিযুক্তের আসল উদ্দেশ্য এবং হামলার কারণ নিয়ে তদন্ত চলছে। পাশাপাশি, সইফের শারীরিক সুস্থতার জন্য দেশজুড়ে তাঁর ভক্তদের প্রার্থনা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের এই সাফল্য আরও একবার প্রমাণ করে, অপরাধ যতই জটিল হোক না কেন, সঠিক পরিকল্পনা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তা সমাধান সম্ভব।
মহাকুম্ভের ‘মোনালিসা’র খ্যাতি নিয়ে বিরক্তি! কেন বললেন, ‘দিনভর ছবি তুলতে ব্যস্ত’?