Sunday, May 18, 2025

সংসার ভাঙছে, নাকি মানুষ সঠিক পথ খুঁজে নিচ্ছে?- মিমি

Share

একদিন মিমির মা বলছিলেন, “আজকাল এত সংসার ভেঙে যাচ্ছে।” উত্তরে মিমি বলেন, “সংসার ভেঙে যাচ্ছে না, মানুষ সঠিক দিকটা বেছে নিচ্ছে।” নারীদের স্বাধীনতার লড়াই যে শুধু সিনেমার পর্দায় সীমাবদ্ধ নয়, তা তিনি নিজের জীবন দিয়েই বোঝাতে চাইলেন। নিজের শিক্ষার জোরে, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে, একজন নারী আজ আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারছে। তাই সংসার ভাঙলেও, মানুষ নিজের মনের শৃঙ্খল মুক্ত করছে।

‘ডাইনি’ – কেবল এক গল্প নয়, বাস্তবের প্রতিচ্ছবি

ওয়েব সিরিজ ‘ডাইনি’ নিয়ে মিমি বলেন, প্রজেক্টটি হাতে পাওয়ার পর তিনি ভেবেছিলেন, “এখনও কি সত্যি এমন হয়?” কিন্তু পরে যখন এক তথ্যচিত্র দেখেন, যেখানে গ্রামের দিকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ডাইনি অপবাদ দিয়ে মেয়েদের পুড়িয়ে মারা হয়, তখন তিনি শিউরে ওঠেন। সমাজের একাংশ আজও নারীদের উপর অত্যাচার চালাতে পিছপা হয় না।

গ্রামে কোনও এক বিধবা নারী যদি সম্পত্তির অধিকারী হন, তবে গ্রামের মোড়ল ও তার দলবল সেই সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য তাকে ‘ডাইনি’ বলে চিহ্নিত করে। এই অমানবিক অত্যাচারের গল্পই ‘ডাইনি’ ওয়েব সিরিজে তুলে ধরা হয়েছে।

নারীর প্রতি বৈষম্য— শিক্ষার অভাব নাকি মগজধোলাই?

মিমি আরও বলেন, সমাজের কিছু জায়গায় নারীদের প্রতি এমন নির্যাতন চলে যা কল্পনাও করা কঠিন। কিছু পরিবারে নারীদের শুধু স্বামী নয়, পরিবারের অন্যান্য পুরুষদের সাথেও সহবাসে বাধ্য করা হয়! ভাবলেই গা গুলিয়ে ওঠে। তবুও, সেই নারীরা এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে, কারণ তাদের শেখানো হয়েছে— এটাই স্বাভাবিক।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষিত পরিবারেও আজও অনেক মা বলেন, “ছেলেরা একটু রাগী হবেই, রাগের মাথায় হাত উঠতেই পারে।” অথচ নারীরা এই সহিংসতাকে মেনে নিচ্ছে বলেই এই প্রবণতা বজায় রয়েছে। অথচ নারীরা যখন নিজেদের অধিকার বোঝে, তখনই সংসার ভাঙার ভয়ে তাদের দোষারোপ করা হয়।

সমাজমাধ্যমে নারী বিদ্বেষ— স্বাভাবিক না অপরাধ?

মিমি মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়া নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। “একজন মেয়েকে গালি দেওয়া, ধর্ষণের হুমকি দেওয়া যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। যেকোনও মেয়ের শরীরের নির্দিষ্ট অংশের দিকে তাকানোকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মেনে নেওয়া হয়।”

তিনি এ-ও বলেন, ট্রোলারদের বিরুদ্ধে তিনি কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন, কারণ সব সময় চুপ থাকলে সমাজ এটাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেবে।

নারীর মুক্তি— কখন আসবে সেই দিন?

নারী-পুরুষ সমানাধিকার অর্জন করলে তবেই এসব অত্যাচার বন্ধ হবে বলে মনে করেন মিমি। তিনি বলেন, “যেদিন ‘ফেমিনিজম’ শব্দটাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ হবে, সেদিনই আসবে পরিবর্তন।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ঋতুচক্রের প্রথম দিন যদি কোনও অনুষ্ঠানে কোনওভাবে বিরক্তি প্রকাশ করি, তাহলে সেটাই বড় খবর হয়ে যাবে! অথচ আমার শারীরিক অসুবিধাটা কেউ বুঝবে না।”

নারী স্বাধীনতার যুদ্ধ— কেবল শুরু হয়েছে

মিমির মতে, নারীদের মগজধোলাই করা হয়েছে এতদিন যে তারা নিজেদের অবস্থা নিয়তিই ভেবে নিয়েছে। তিনি বলেন, “একটি তথ্যচিত্রে এক নারী বলছিলেন, ‘আমি তো এই জন্যই তৈরি।’ অর্থাৎ, তার মানসিকতাকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যেন সে নিজের ওপর হওয়া অবিচারকে স্বাভাবিক মনে করে!”

এই কারণেই নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। শিক্ষাই পারে তাদের অধিকার বুঝতে সাহায্য করতে।

সমাজের পরিবর্তন দরকার, এখনই!

মিমি বিশ্বাস করেন, পুরনো ধ্যানধারণার পরিবর্তন করতে হবে। সমাজ আজও নারীদের স্বনির্ভরতা মেনে নিতে পারেনি। আজও সমাজ মনে করে, নারীদের নির্যাতন মেনে নেওয়াই উচিত।

কিন্তু পরিবর্তন আসছেই। নারীরা তাদের স্বাধীনতার জন্য, নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। আর এই লড়াইই ভবিষ্যতে সমাজকে বদলে দেবে।

বিচ্ছেদের পর বিশাল অঙ্কের খোরপোশ দিতে হবে যুজবেন্দ্র চহল! আদালতের রায়ে আলোড়ন

Read more

Local News