সংরক্ষণ বিতর্কে উত্তাল রাজ্যসভা!
কর্নাটকে সরকারি ঠিকাদারির বরাতে মুসলিম সংরক্ষণ নিয়ে সোমবার রাজ্যসভায় তীব্র বিতর্ক দেখা দিল। বিজেপি এবং কংগ্রেসের সাংসদরা একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার অভিযোগ, কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার চার শতাংশ মুসলিম সংরক্ষণ চালু করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। অন্য দিকে, কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এই অভিযোগের কড়া জবাব দেন।
মুসলিম সংরক্ষণ ইস্যুতে নড্ডার ক্ষোভ
বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা বলেন, “বাবাসাহেব অম্বেডকর স্পষ্ট ভাষায় সংবিধানে উল্লেখ করেছেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোনও সংরক্ষণ দেওয়া যাবে না। অথচ কংগ্রেস এই নীতিকে ধূলিসাৎ করে মুসলিম সংরক্ষণ চালু করেছে।” তিনি অভিযোগ করেন, এটি শুধু অসাংবিধানিক নয়, দেশের ঐক্যের পরিপন্থী। নড্ডার মতে, কংগ্রেস ধর্মের রাজনীতি করে বিভাজনের রাজনীতিকে উস্কে দিচ্ছে।
কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ
এই অভিযোগের জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “বিজেপি সংবিধানকে ধ্বংস করতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হল সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো। সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এটাকে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”
শিবকুমারের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক
বিজেপি সাংসদরা কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমারের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। শিবকুমার নাকি ঘোষণা করেছিলেন, কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে সংবিধান সংশোধন করে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে। বিজেপি এই মন্তব্যকে সংবিধানবিরোধী বলে আখ্যা দিয়ে আইনি পদক্ষেপের দাবি তোলে।
রাজ্যসভায় অচলাবস্থা
রাজ্যসভায় বিজেপি এবং কংগ্রেস সাংসদদের তুমুল বাদানুবাদের কারণে সভায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। অধ্যক্ষ জগদীপ ধনখড় বারবার শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু হট্টগোল চলতেই থাকায় অবশেষে তিনি দুপুর ২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন।
সংরক্ষণ বিতর্কের প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার সম্প্রতি সরকারি ঠিকাদারির বরাতে মুসলিমদের জন্য চার শতাংশ সংরক্ষণ চালু করেছে। কংগ্রেসের যুক্তি, এটি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু বিজেপি একে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ আখ্যা দিয়ে বিরোধিতা করছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫ এবং ১৬ অনুযায়ী, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তবে ধর্মের ভিত্তিতে সরাসরি সংরক্ষণ দেওয়া নিয়ে সাংবিধানিক বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।
সংরক্ষণ ইস্যুতে রাজনৈতিক সমীকরণ
এই বিতর্কের পেছনে রাজনৈতিক সমীকরণও গুরুত্বপূর্ণ। কর্নাটকে মুসলিম জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য। কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের সমর্থন ধরে রাখতে চায়, আর বিজেপি এর বিরুদ্ধে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে সংহত করার চেষ্টা করছে। ফলে সংরক্ষণ ইস্যু আরও বেশি রাজনৈতিক রঙ ধারণ করেছে।
শেষ কথা
সংরক্ষণ বিতর্ককে ঘিরে রাজ্যসভায় উত্তেজনা এখনও থামেনি। বিজেপি এবং কংগ্রেস নিজেদের অবস্থানে অনড়। এই ইস্যুতে রাজনৈতিক লড়াই যে আরও তীব্র হবে, তা বলাই বাহুল্য। তবে সংবিধান এবং দেশের সার্বিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে শান্তিপূর্ণ আলোচনাই হতে পারে সঙ্কট সমাধানের পথ।