শেষ মুহূর্তের লড়াই জিতে পর্দায়!
দীর্ঘ সাত দিনের অস্থিরতা, আলোচনা, টানাপড়েন— সবশেষে সব বাধা পেরিয়ে মুক্তির আলো দেখল পরিচালক জয়ব্রত দাসের প্রথম ছবি ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’। নির্ধারিত দিন ১৪ নভেম্বর ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও, ফেডারেশনের তোলা প্রতারণার অভিযোগে আচমকাই থমকে যায় মুক্তির পথ। প্রযুক্তিবিদদের বকেয়া টাকা মেটানো না-হওয়াই ছিল বড় কারণ। টানা একাধিক বৈঠক, কথাবার্তা, দর-কষাকষির পর অবশেষে প্রযোজক বকেয়া মিটিয়ে দিলে ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। আর তাই এক সপ্তাহ পিছিয়ে ২১ নভেম্বর মুক্তি পেল বহু প্রতীক্ষিত এই ছবি।
পরিচালক জয়ব্রত দাসের আবেগে ভরা কণ্ঠেই ধরা পড়েছিল কতটা আশঙ্কার ভেতর দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে। প্রথম ছবি মুক্তির আগে এমন অভিজ্ঞতা সত্যিই কেউ চান না। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ছবিটি মুক্তি পাওয়ায় তাঁর চোখেমুখে ছিল স্বস্তি আর আনন্দের মিশ্র ঝিলিক।
এই লড়াইয়ে প্রথম থেকেই পরিচালক জয়ব্রতের পাশে দেখা গিয়েছে অভিনেতা সৌরভ দাসকে। ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে বৈঠক হোক বা ছবিমুক্তি আটকে যাওয়ার অভিযোগ— সর্বত্র সৌরভ ছিলেন সহায়ক শক্তি হিসেবে। বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়ে তাঁর উৎসাহ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জীবন দাসের চরিত্রে অভিনয় করা সৌরভ এ দিন বলেন, “এই ছবিটা করতে আমাকে রাজি করিয়েছিলেন রুদ্রদা। এত বাধা পেরিয়ে আমরা সবার শেষে এসেছি, তবে বিশ্বাস রাখুন— আমরা সবার থেকে এগিয়ে যাব।”
এ দিন মুক্তি পেয়েছে আরও দু’টি বাংলা ছবি— ‘ডিপ ফ্রিজ’ এবং ‘লক্ষীকান্তপুর লোকাল’। কিন্তু সৌরভের দাবি, ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ই বাকি সব ছবিকে পিছনে ফেলবে। তাঁর কথায় ফুটে ওঠে অগাধ আত্মবিশ্বাস ও ছবির প্রতি তাঁর আবেগ।
অন্যদিকে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, যিনি বিনা পারিশ্রমিকে ছবিতে কাজ করেছেন, শুরু থেকেই সরব ছিলেন। ছবির মুক্তি আটকে যাওয়ার খবর সামনে আসতেই তিনি বারবার সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। যদিও হঠাৎ মুক্তির ঘোষণায় প্রথমে তাঁর মনে সন্দেহ ছিল— এত তাড়াতাড়ি কত জন দর্শকের কাছে পৌঁছবে ছবি? তবু বিশেষ প্রদর্শনীর রাতে রুদ্রনীল ছিলেন উজ্জ্বল ও খুশি। মুখে হাসি নিয়ে বললেন, “কিছু কাজ থাকে যেগুলো পয়সা দিয়ে মাপা যায় না। এই কাজটা করলে মনে শান্তি পাই। ডাল-ভাতেই চলবে, এমন কাজ করতে পারলেই আনন্দ।”
পরিচালক জয়ব্রত আগেই জানিয়েছিলেন যে, প্রচারের জন্য আর তেমন অর্থ তাঁদের হাতে নেই। কিন্তু শুক্রবার ছবির মুক্তির পর তাঁর মনজুড়ে ফের উচ্ছ্বাস। প্রথম ছবি মুক্তি নিয়ে এমন দুঃসহ অভিজ্ঞতায় তিনি অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। তবে দর্শকের প্রশংসা আর ইন্ডাস্ট্রির মানুষের সমর্থন তাঁকে নতুন করে শক্তি জুগিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “দর্শকের ভালোবাসা আর সহকর্মীদের পাশে পাওয়া— এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর নেই।”
বিশেষ প্রদর্শনীর সন্ধ্যায় হাজির ছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা রুদ্রনীল, ইন্দ্রশিষ আচার্য, দর্শনা বণিক, নীল ভট্টাচার্য-সহ বহুজন। তাঁদের উপস্থিতিতে উচ্ছ্বসিত ছিল পুরো টিম।
সব মিলিয়ে বলা যায়—
বাধা, বিতর্ক, আটকে যাওয়া মুক্তি— সব পেরিয়ে ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ এখন নিজের জায়গা করে নিতে প্রস্তুত। আর সেই আত্মবিশ্বাসেই গলা মিলিয়েছেন সৌরভ দাস—
“সবার শেষে এসেছি, কিন্তু সবার থেকে অনেকটাই এগিয়ে যাব।”

