Friday, April 25, 2025

শেখ হাসিনা ছাড়া ‘পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগ’? দল ভাঙার নেপথ্যে গভীর চক্রান্তের ছায়া

Share

শেখ হাসিনা ছাড়া ‘পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগ’?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের ঝড় উঠেছে। আলোচনার কেন্দ্রে এক নতুন শব্দবন্ধ— ‘পরিচ্ছন্ন’ বা ‘নব্য আওয়ামী লীগ’। দলেরই পরিচিত কিছু নেতাকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বাইরে রেখে একটি নতুন রূপে আওয়ামী লীগকে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছেন বর্তমান নেতৃত্ব। যদিও এই পরিকল্পনাকে তারা বলছেন ‘বিশুদ্ধ প্রতারণা’ এবং দলের ‘মূল শিকড় উপড়ে ফেলার গভীর চক্রান্ত’।

হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগ?

সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা এনসিপি (জাতীয় নাগরিক দল)-র নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ একটি ফেসবুক পোস্টে জানান, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ এক কর্তা তাঁদের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় জানান— শিরিন শরমিন চৌধুরী, শেখ ফজলে নুর তাপস, সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো নেতা-নেত্রীদের সামনে রেখে নতুন এক আওয়ামী লীগ গঠন করতে হবে। তাদের দায়িত্ব হবে শেখ হাসিনাকে অস্বীকার করা এবং বঙ্গবন্ধুর নাম করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া।

হাসনাতের বক্তব্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পনা মে মাস থেকেই বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। নেতারা জনগণের সামনে হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেদের ‘পরিচ্ছন্ন’ বলে দাবি করবেন— এটাই চক্রান্তকারীদের রূপরেখা।

ভারতও চিন্তিত

এই পরিস্থিতিতে ভারতও উদ্বিগ্ন। দিল্লির এক প্রাক্তন কূটনীতিক মন্তব্য করেছেন, “আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের আস্থাভাজন। এই দলের নেতৃত্ব পাকিস্তান ঘনিষ্ঠদের হাতে গেলে তা ভারতের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।” কারণ, যাঁদের ‘পরিচ্ছন্ন’ বলা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে অনেকে চীন ও পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বলেই পরিচিত।

আওয়ামী লীগের পাল্টা প্রস্তুতি

দলীয় ভাঙন ও বিভ্রান্তি আটকাতে আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব জেলা ধরে ধরে ভার্চুয়াল বৈঠকে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। শেখ হাসিনা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন এসব বৈঠকে। ইতোমধ্যে ২৩টি জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তিনি। সেখানেই হাসিনা বলেন, “আমি দেশ ছাড়িনি, ইস্তফাও দিইনি। আমাকে জোর করে তোলা হয়েছে। সব চক্রান্তের জবাব দিতেই ফিরব।”

দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ২০০৬ সালেও এমন চক্রান্ত হয়েছিল, তাতে কিছু হয়নি। এবারও হবে না। তাঁর কথায়, “আওয়ামী লীগ মানে বঙ্গবন্ধু। সেই ধারার একমাত্র উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। তাঁকে ছাড়া দল টিকবে না, এটুকু সবাই জানে। আসল লক্ষ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগকেই শেষ করে দেওয়া।”

চাপে কলকাতার আশ্রয়ে থাকা নেতারা

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কলকাতায় আত্মগোপন করে থাকা কিছু নেতাও চিন্তিত। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁদের অনেকেই চাপে রয়েছেন। বিএনপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা তাঁদের ফোন করে বলছেন— হাসিনার বিরুদ্ধে গেলেই নিরাপত্তা দেওয়া হবে, নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে। না হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

তবে দলীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছে— “যাঁদের পরিচ্ছন্ন বলে দাবি করা হচ্ছে, তাঁদের অতীত আদৌ পরিচ্ছন্ন নয়। তাঁরা নিজের স্বার্থেই এই চক্রান্তের অংশ। কিন্তু কর্মীরা জানেন, আওয়ামী লীগের শিকড় যত গভীরে, ততই শক্ত ভিত।”

শেষ কথা:
বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রান্তিকালের মুখে। শেখ হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগ গঠনের প্রস্তাব অনেকের কাছেই দল ভাঙার এক সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। তবে হাসিনা ও তাঁর অনুগামীরা জানিয়ে দিয়েছেন— এই যুদ্ধে তাঁরা পিছু হটবেন না। এখন দেখার, রাজনীতির এই টানাপোড়েন কোথায় গিয়ে থামে।

মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ

Read more

Local News