শুল্কের খেলায় বিপন্ন বিশ্ব অর্থনীতি!
বিশ্ব অর্থনীতির উপর নতুন করে অশনি সংকেত!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই নীতি শুধু যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি করছে তা-ই নয়, বরং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (UNCTAD)-র সেক্রেটারি জেনারেল রেবেকা গ্রিনস্প্যান স্পষ্টভাবে বলেছেন, “বাণিজ্য যে কোনও দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। তাই তাকে উত্তেজনার হাতিয়ার বানানো চলবে না।”
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড়
ভারতীয় সময় অনুযায়ী বুধবার গভীর রাতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যেসব দেশ আমেরিকার পণ্যে শুল্ক বসিয়েছে, তাদের ওপর পাল্টা শুল্ক চাপানো হবে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারতের পণ্যে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছে।
বিশ্ব বাজারে এই ঘোষণার তীব্র প্রভাব পড়ে। শেয়ার বাজারে নামে ধস, ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয় অস্থিরতা।
এদিকে ট্রাম্পের নীতির প্রতিক্রিয়ায় চিন সরকারও বসে থাকেনি। তারা ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমেরিকার পণ্যে সমপরিমাণ ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গেই, চিনে ব্যবসা চালানো ১১টি মার্কিন সংস্থা বন্ধ করে দেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের রফতানিতেও রাশ টানা হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জ কী বলছে?
রাষ্ট্রপুঞ্জ মনে করছে, এইভাবে একের পর এক দেশ যদি ‘শুল্কের পাল্টা শুল্ক’ খেলায় মেতে ওঠে, তাহলে সার্বিক ভাবে সারা বিশ্বের অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
রেবেকা বলেন,
“এটা পারস্পরিক সহযোগিতার সময়। এখন উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলার কোনও মানে নেই। দরিদ্র, ছোট ও উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই নীতি।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন বাণিজ্যনীতি প্রয়োজন, যা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সক্ষম এবং ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নকে মাথায় রেখে গঠিত।”
কেন উদ্বিগ্ন বিশ্ব?
বিশ্ব অর্থনীতির একাধিক স্তম্ভই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল।
📉 শুল্ক বাড়লে রফতানি ও আমদানি ব্যয় বাড়ে।
📦 পণ্যের দাম বাড়ে, বাজারে চাহিদা কমে।
🌍 বিশ্ব বাণিজ্য কমে গিয়ে প্রবৃদ্ধি থমকে দাঁড়ায়।
👥 সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন দরিদ্র দেশগুলির কৃষক, শ্রমিক ও ছোট ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক যুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে তা শুধু বড় শক্তিগুলোকেই নয়, বরং গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
উপসংহার: সংযমই সমাধান
বিশ্বের দুই শক্তিশালী দেশের এই শুল্ক দ্বন্দ্ব এখন শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির এক বড় হুমকি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের এই বার্তা তাই খুবই তাৎপর্যপূর্ণ—
👉 বাণিজ্য হোক সহযোগিতার হাতিয়ার, প্রতিশোধের নয়।
👉 উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বাঁচাতে হলে, চাই ন্যায্য এবং সহনশীল বাণিজ্যনীতি।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে, এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেয় আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশগুলো। কারণ, একটাই ভুল পদক্ষেপ বদলে দিতে পারে কোটি কোটি মানুষের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।
ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!