Sunday, May 4, 2025

শুল্কনীতি নয়, দরকার স্থিতিশীলতা! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে আর্থিক মন্দা ঠেকানো যাবে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

Share

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে আর্থিক মন্দা ঠেকানো যাবে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বিশ্বজুড়ে আর্থিক দুশ্চিন্তার মেঘ কাটছে না কিছুতেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একাধিক দেশকে সাময়িকভাবে শুল্ক ছাড় দিলেও, বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিবিদদের মতে এতে সামগ্রিক মন্দা আটকানো সম্ভব নয়। বরং ট্রাম্পের এই নীতিগত দোলাচলের জেরে বিশ্ব অর্থনীতি আরও অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণায় কী বলা হয়েছে?
চিন ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের উপর নতুন শুল্ক আরোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও চিনা পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে তা একলাফে ১২৫ শতাংশে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের মতে, যেসব দেশ আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি, তাদের ‘পুরস্কৃত’ করা হবে। তবে হোয়াইট হাউস এখনও এই সিদ্ধান্তের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি।

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এই সিদ্ধান্ত
বিশ্বের অন্যতম বড় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক জেপি মর্গ্যান চেজের মতে, ট্রাম্পের এই নীতির ফলে আগামী দিনে বিশ্বজুড়ে ৬০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে আর্থিক মন্দার। শুধু জেপি মর্গ্যানই নয়, আরএসএম ইউএস সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসুয়েলাসও বলছেন, শুল্ক নীতিতে সাময়িক ছাড় দিলেও তা দীর্ঘমেয়াদে কোনও স্থায়ী সমাধান নয়।

আরও উদ্বেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে গোল্ডম্যান স্যাক্স
বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর একদল অর্থনীতিবিদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আগামী ১২ মাসে ৪৫ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বজুড়ে আরেকটি বড়সড় মন্দা আসার। তাঁদের মতে, ট্রাম্পের ‘শুল্ক যুদ্ধ’ এখনও শেষ হয়নি—এটা বরং “শেষের শুরু”।

২০১৮-১৯ সালের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে এই ধাক্কা
জেপি মর্গ্যানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে যেসব শুল্ক বলবৎ রয়েছে, তা আগের শুল্ক যুদ্ধের তুলনায় ৭.৫ গুণ বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে চিনা পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধির ফলে প্রায় ৮৬০ বিলিয়ন ডলারের কর ভার চাপতে পারে, যা ভারতীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ৭৪০০ কোটি টাকা

শেয়ার বাজারে অস্থিরতা এবং আমজনতার ক্ষোভ
ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আমেরিকায় শুরু হয়েছে বড়সড় আন্দোলন। নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি-সহ একাধিক শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। পাশাপাশি, ট্রাম্পের নীতির জেরে আমেরিকার শেয়ার বাজারে প্রবল অস্থিরতা দেখা গিয়েছে। যদিও নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই ‘এস অ্যান্ড পি ৫০০’ ও ‘ন্যাসড্যাক’ সূচক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের বার্তা: দরকার স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, বার বার নীতির রদবদল বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করছে। তারা বলছেন, “শুল্ক বাড়িয়ে বা কমিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্য ফেরানো সম্ভব নয়। বরং দরকার সুস্পষ্ট এবং স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি, যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হয়।”

সার্বিকভাবে বললে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা আর্থিক ঝুঁকি কমাতে পারবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সেই কারণেই, বিশ্ব অর্থনীতির আকাশ থেকে এখনও কাটেনি দুশ্চিন্তার ঘনঘটা।

তালা ভাঙার পাল্টা তালা! কসবা থেকে হুগলি—চাকরিহারাদের ক্ষোভে কাঁপছে রাজ্য

Read more

Local News