ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব গত কিছু সময় ধরে ক্রমাগত ব্যর্থতার সম্মুখীন হচ্ছে। চলতি মরসুমের শুরু থেকেই, তারা টানা ছ’টি ম্যাচে হারার পর সমাজমাধ্যমে রীতিমতো সমালোচনার শিকার হয়েছে। প্রতিপক্ষ ক্লাবের সমর্থক থেকে শুরু করে নিজেদের সমর্থকদের কাছেও ইস্টবেঙ্গল রেহাই পাচ্ছে না। বিশেষ করে গত মঙ্গলবার আইএসএলে ওড়িশার বিরুদ্ধে হারের পর সামাজিক মাধ্যমে একাধিক পোস্টে ইস্টবেঙ্গলের অবস্থার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা এবং বিস্ময়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আসলে, এই ক্লাবটির ইতিহাসে এটি একটি নিন্দনীয় অবস্থান। চলুন, জানি কেন এত অবনতি ঘটছে ইস্টবেঙ্গলে।
১. গোটা দলের খারাপ ফিটনেস
ইস্টবেঙ্গল এই মরসুমে অন্যান্য ক্লাবগুলির তুলনায় সবচেয়ে আগে অনুশীলন শুরু করেছিল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, মাঠে তাদের ফিটনেসের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ম্যাচের ৭০ মিনিটের পর বেশিরভাগ ফুটবলারেরা পুরোপুরি ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং খেলার গতিশীলতা হারিয়ে ফেলেন। ফিটনেস কোচের প্রতি অভিযোগ উঠছে। ফিটনেসের দায়িত্বে থাকা কার্লোস জিমেনেজ়ের উপর প্রশ্ন উঠেছে। তিনি যে কোনও ক্লাবের জন্য বিশেষভাবে সফল হতে পারেননি, সেটি প্রমাণিত। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি দলের ফিটনেসের উন্নতি না ঘটে, তাহলে ম্যাচ জয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই।
২. ফুটবলারদের মানসিকতা তলানিতে
টানা ছ’টি হার খেলতে থাকা ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের মধ্যে হতাশার একটি আঘাতজনক স্তর তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে খেলার আগ্রহ ও উদ্দীপনা নেই। ম্যাচ জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আগ্রহের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। দলের মধ্যে কোনও নেতা নেই, যে কিনা দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে। মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে সমর্থন এবং সহায়তার অভাব বোধ করছে। ব্রুজ়োও জানিয়েছেন যে, মানসিক দিক নিয়ে কাজ করতে হবে, কিন্তু তাঁদের অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে না।
৩. প্রতি ম্যাচে গোল নষ্টের প্রবণতা
দলের মানসিকতার কারণে ইস্টবেঙ্গলের ফরোয়ার্ডরা গলে যেতেও দ্বিধা করছে। তাঁরা প্রচুর সুযোগ তৈরি করে কিন্তু গোল করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারছে না। অনুশীলনের অভাব, ভুল বোঝাপড়া এবং গোল করার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাব তাদের খেলার ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইতিমধ্যে, ম্যাচের সময় সুযোগগুলি হাতছাড়া হচ্ছে, যা দলের হারকে আরও নিশ্চিত করছে।
৪. রক্ষণের দৈন্যদশা
ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের সামর্থ্যও অত্যন্ত দুর্বল। আনোয়ার আলি এবং হেক্টর ইয়ুস্তে দলের রক্ষণের জন্য আনা হলেও তারা নিজেদের চূড়ান্ত ফর্মে নেই। গত মরসুমে সফল থাকা এই ডিফেন্ডারদের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া নেই। ইস্টবেঙ্গলকে যে কয়েকটি গোল খেতে হয়েছে, তার বেশিরভাগই রক্ষণের অসঙ্গতির কারণে। কোচ ব্রুজ়ো বলেছেন, “প্রতিটি ম্যাচে চার-পাঁচ গোল খাওয়া ঠিক নয়,” কিন্তু তাঁকে রক্ষণের দুর্বলতা নিয়ে কাজ করতে হবে।
৫. ম্লান তারকা ফুটবলারেরা
ইস্টবেঙ্গল গত মৌসুমের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে দল গঠন করলেও তাঁদের অনেকেই প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দিতে পারছেন না। দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস এবং মাদিহ তালালদের মতো খেলোয়াড়দের সত্ত্বেও গোলের সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। ইয়ুস্তে ডার্বিতে খারাপ গোল খেয়েছেন এবং দিয়ামানতাকোসও সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন।
৬. কুয়াদ্রাতের ভুল পদক্ষেপ
পদত্যাগী কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের অধীনে দলটি নিজেদের মধ্যে ঠিকভাবে বোঝাপড়া করতে পারেনি। প্রথম তিন ম্যাচের পর তিনি পদত্যাগ করেছেন, এবং এরপর যা ঘটেছে, তা দলের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। ক্লাব কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁর পছন্দের ফুটবলারদের দলে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে ইস্টবেঙ্গল বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছে।
৭. মরসুমের মাঝেই কোচ বদল
একাধিক কোচ বদলের ফলে খেলোয়াড়দের মানসিকতা এবং সমন্বয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোচ বিনো জর্জের অধীনে জামশেদপুর ম্যাচ খেলার পর ব্রুজ়ো দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এত ঘন ঘন কোচ বদল কোনো দলের জন্য স্বাস্থকর নয়, এটি ইস্টবেঙ্গলের জন্যও সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
সব মিলিয়ে, ইস্টবেঙ্গলকে তাদের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, তাদের ফিটনেসের উন্নতি, মানসিক শক্তি বাড়ানো, এবং কোচের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তাঁরা যে কোনও ক্লাবের মতো একটি পেশাদার দলের জন্য, এই মুহূর্তে প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে হবে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে তারা তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করবে।