সুনীতার ছবি দেখে বিশ্ব স্তম্ভিত
২০২৪ সালের ৫ জুন, ফ্লোরিডা থেকে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল বোয়িং স্টারলাইনার। মহাকাশযানটি গন্তব্য ছিল আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন (আইএসএস)। সেই সময় সুনীতা উইলিয়ামসের ওজন ছিল ৬৩ কেজি। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে মহাকাশে অবস্থান করার পর, সম্প্রতি সুনীতার কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলি দেখে সারা বিশ্বে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সুনীতার শারীরিক অবস্থার অবনতি এবং ওজনের দ্রুত কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এই অভিযানের সময় সুনীতা ও তাঁর সহযাত্রী বুচ উইলমোর মহাকাশে আটকে আছেন। বোয়িং স্টারলাইনারের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সুনীতা এবং বুচের আট দিনের সফর পাঁচ মাসে পরিণত হয়েছে। এই দীর্ঘ সময় মহাকাশে অবস্থান করার ফলে সুনীতার শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনকভাবে বদলে গেছে। তাঁর ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে এবং তাঁকে এখন অনেক শীর্ণকায় দেখাচ্ছে। নাসার পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে যে, সুনীতার প্রাণ সংশয় নেই, তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
মহাকাশে গিয়ে নভোচারীদের শরীরের পেশি এবং হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে, কারণ সেখানে অভিকর্ষের অভাব থাকে। এর ফলে পেশির ক্ষয় দ্রুত হয়। সুনীতার ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, যার কারণে তাঁর শরীরের ওজন কমে গেছে। মহাকাশচারীদের খাদ্যাভ্যাসে প্রতিদিন ৩,৫০০ থেকে ৪,০০০ ক্যালোরির খাবার খাওয়া জরুরি, যাতে পেশি ও হাড় শক্তিশালী রাখা যায়। তবে সুনীতার শারীরিক অবস্থায় যা পরিবর্তন ঘটছে, তা উদ্বেগজনক।
নাসা জানিয়েছে, মহাকাশে থাকার কারণে মহিলাদের শরীর পুরুষদের তুলনায় দ্রুত পেশি ক্ষয়ের সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে সুনীতার ক্ষেত্রে, শারীরিক অভিজ্ঞতায় বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে পেশি এবং হাড়ের ঘনত্ব ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মহাকাশে বেশিদিন থাকলে রক্তের লাল কণিকার পরিমাণও দ্রুত কমে যায়, যার ফলে রক্তাল্পতার মতো শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
যদিও সুনীতা ও বুচের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়লেও, নাসা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সুনীতাকে ফিরিয়ে আনার জন্য নাসা পরিকল্পনা করছে। একটি নতুন মহাকাশযান, স্পেস এক্সের “ক্রু ড্রাগন” দিয়ে তাঁদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। সেই পর্যন্ত, সুনীতা ও বুচ আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে অবস্থান করবেন।
এদিকে, সুনীতা নিজে শারীরিক অবস্থা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন। তিনি জানিয়েছেন, মহাকাশ তাঁর জন্য একটি ঘর। সেখানে থাকা তাঁকে ভালো লাগে এবং তিনি তার অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। সম্প্রতি তিনি মহাকাশ থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠকও করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন যে, মহাকাশের পরিবেশে তিনি অনেক কিছু শিখছেন এবং সেখানে কাজ করতে তাঁর ভালো লাগে।
তবে এই পরিস্থিতি সুনীতার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি, ওজন কমে যাওয়া এবং পেশির ক্ষয় নিয়ে নাসা উদ্বিগ্ন। তবে সুনীতার মনোবল এবং পরিস্থিতির প্রতি তাঁর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তার অভিযানের সফলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নাসা জানিয়েছে যে, সুনীতার জন্য যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার এবং পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকে। প্রতিদিনের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সুস্থ থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে তাঁর ওজন কমে না যায় এবং পেশি ক্ষয়ের হার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এছাড়া, সুনীতার জন্য আরও একটি সমস্যা হচ্ছে মহাকাশের পরিবেশ। মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে শরীরের বিপাকের পরিবর্তন হয় এবং এর ফলে মহিলাদের পেশি ক্ষয় পুরুষদের তুলনায় বেশি হয়। কিন্তু সুনীতার জন্য নাসা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে এবং সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করার চেষ্টা করছে, যাতে শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ না হয়।
সবশেষে, সুনীতা মহাকাশে থাকা অবস্থায় নিজের জন্মদিনও উদযাপন করেছেন। গত সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই ৫৯ তম জন্মদিন পালন করেছেন তিনি। মহাকাশে বসে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি এবং অন্যান্য মহাকাশচারীরা প্রমাণ করেছেন যে, মহাকাশের উচ্চতায়ও তারা পৃথিবীর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন।
এভাবেই সুনীতা উইলিয়ামস, যিনি একাধারে একজন মহাকাশচারী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত, তাঁর শারীরিক এবং মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে মহাকাশ অভিযানে তার জায়গা আরও শক্ত করেছে।