শীতে পিঠের ব্যথা বাড়ছে
শীতকাল এলেই অনেকের শরীরের নানা ধরনের ব্যথা-বেদনা বাড়তে শুরু করে, বিশেষ করে পিঠের ব্যথা। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা কমে যায়, ফলে পিঠে ব্যথা বা চোট-আঘাতের সমস্যা বাড়ে। এর পাশাপাশি শারীরিক সক্রিয়তার অভাবও এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা গেলে মেরুদণ্ডের সমস্যা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
কেন শীতে পিঠে ব্যথা বেড়ে যায়?
শীতকালীন ঠান্ডার প্রভাব মেরুদণ্ডের ওপর বেশ খারাপভাবে পড়ে। ‘ইন্ডিয়ান স্পাইন ইনজুরিজ় সেন্টার’-এর চিকিৎসক বিকাশ টন্ডন বলেন, তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা হারিয়ে যায়, বিশেষত যদি শরীরচর্চা না করা হয়। শীতকালে শারীরিক কসরত কমে যাওয়ায় মেরুদণ্ডের পেশি, অস্থিসন্ধি এবং লিগামেন্টের নমনীয়তা কমে যায়, যা ব্যথা এবং চোট-আঘাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
শীতকালীন ঠান্ডায় পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচলও স্লো হতে থাকে, যার কারণে পিঠে ব্যথা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে বা শুয়ে থাকার কারণে শিরদাঁড়ায় চাপ পড়লে ব্যথা আরও বাড়তে পারে।
শীতকালে মেরুদণ্ডের ক্ষতি হওয়ার কারণ
১) পেশির শক্ত হয়ে যাওয়া: শীতকালে শারীরিক তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে দেহের পেশি ও অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে শিরদাঁড়ার নমনীয়তা কমে যায় এবং ব্যথার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২) ভুল ভঙ্গিতে বসা বা শোয়া: শীতের দিনে, শিরদাঁড়ার পেশি ও স্পাইনাল ডিস্কে অতিরিক্ত চাপ পড়লে ব্যথা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে এক জায়গায় বসে বা শুয়ে থাকলে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা নষ্ট হয়।
৩) রক্ত চলাচলে সমস্যা: শীতকালে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে না হলে স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা মেরুদণ্ডের ব্যথার কারণ হতে পারে।
কীভাবে মেরুদণ্ডের যত্ন নেবেন?
শীতকালীন ঠান্ডা থেকে মেরুদণ্ডকে রক্ষা করতে এবং ব্যথা কমাতে কিছু সতর্কতা ও পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারে:
১) বাড়িতে শারীরিক কসরত করুন: শীতকালে বাইরে বের হতে ইচ্ছা না হলেও, বাড়ির মধ্যে কিছু শারীরিক কসরত করতে হবে। হাঁটা, সোজা হয়ে দাঁড়ানো বা কিছু হালকা এক্সারসাইজ করতে পারেন। এতে মেরুদণ্ডের পেশি নমনীয় থাকবে এবং ব্যথা কমবে।
২) সোজা হয়ে বসুন: মেরুদণ্ডকে সোজা ও সঠিক ভঙ্গিতে বসানোর চেষ্টা করুন। দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকলে পিঠে চাপ পড়ে, যা ব্যথা বাড়াতে পারে। বসার সময় পিঠ সোজা রেখে বসুন এবং পেট মুড়ে বা ঝুঁকে বসবেন না।
৩) প্রতি আধ ঘণ্টা পর বিরতি নিন: একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার পরিবর্তে, প্রতি আধ ঘণ্টা পর একটু হাঁটাহাঁটি বা শরীরি কসরত করুন। এতে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বজায় থাকে এবং ব্যথার সমস্যা কমে।
৪) তাপমাত্রার উপর নজর রাখুন: শীতের মধ্যে অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। পোশাকের মধ্যে উষ্ণতা বজায় রাখুন, যাতে পেশি শক্ত না হয়ে যায়। বাড়িতে তাপমাত্রা খুব কম না রাখার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে শীতকালীন রাতে।
৫) পানি পান করুন: শীতকালে পানির পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা শরীরের ফ্লুয়িড লেভেলকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি পেশি ও অস্থিসন্ধির নমনীয়তা কমিয়ে দেয়। তাই শীতেও পর্যাপ্ত পানি পান করার চেষ্টা করুন।
উপসংহার
শীতকাল মেরুদণ্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কিন্তু কিছু সাধারণ যত্ন ও সচেতনতার মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। শারীরিক কসরত বজায় রাখা, সঠিক ভঙ্গিতে বসা, এবং শীতের মধ্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার মতো কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করলে মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। শীতকালীন ব্যথা বা জখমের সমস্যা এড়াতে আজই সতর্কতা অবলম্বন করুন।