শিশু বিক্রি চক্রে সারোগেসির যোগ
সিআইডির সাম্প্রতিক তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে শিশু বিক্রির একটি চক্র, যেখানে সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুদের বেআইনিভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃত দম্পতি এবং অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম
তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ধৃত দম্পতি যে দু’দিনের শিশুটিকে বিহার থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে এনেছিল, সেই শিশুটির জন্ম সারোগেসির মাধ্যমে। তবে বিহারের ঠিক কোন আইভিএফ সেন্টারে শিশুটির জন্ম হয়েছিল, তা নিশ্চিত হতে এখনও তদন্ত চলছে। সিআইডি সন্দেহ করছে যে, এই চক্রের মূল পরিকল্পকরা দুঃস্থ মহিলাদের সারোগেসির কাজে ব্যবহার করে, পরে সেই নবজাতককে বিক্রি করত।
বিহারে তল্লাশি অভিযান
ধৃত মানিক হালদারকে নিয়ে তদন্তকারীরা বিহারের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছেন। পাশাপাশি, মানিকের কলকাতার বাড়িতে এবং তার সহযোগী মুকুল হালদারের বাসস্থানে তল্লাশি চালানো হয়। যদিও তল্লাশির সুনির্দিষ্ট ফলাফল সম্পর্কে সিআইডি এখনও প্রকাশ্যে কিছু জানায়নি।
বেআইনি কারবারে মানিকের জড়িত থাকা
গোয়েন্দাদের মতে, মানিক হালদার প্রায় পাঁচ বছর ধরে শিশু বিক্রির এই চক্রে সক্রিয়। বেহালার একটি আইভিএফ সেন্টারে এসি মেকানিক হিসাবে কাজ করার সময়ই সে এই চক্রে জড়িয়ে পড়ে। মানিকের সঙ্গে মুকুল হালদারের পরিচয়ও ওই কাজের সূত্রেই।
সারোগেসি চক্রের চিত্র
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, চক্রটি দুঃস্থ ও অসহায় মহিলাদের সারোগেসির জন্য ব্যবহার করত। মহিলাদের সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান ধারণে বাধ্য করা হতো এবং পরে সেই শিশুদের দুই থেকে দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হতো। সিআইডি মনে করছে, এই চক্রের সঙ্গে আইভিএফ সেন্টার এবং বেআইনি নার্সিংহোমের যোগসাজশ রয়েছে। এর আগে আনন্দপুরে শিশু পাচারের ঘটনায় সারোগেসি চক্রের অস্তিত্ব ধরা পড়েছিল, যেখানে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন
তদন্তকারীরা মানিকের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছেন। গত কয়েক বছরে তার অ্যাকাউন্টে লক্ষাধিক টাকার লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের সূত্র ধরে কোথায় কোথায় শিশু বিক্রি করা হয়েছিল, তা অনুসন্ধান করছে সিআইডি।
চক্রের বিস্তার
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শুধু কলকাতা নয়, বাইরের রাজ্যেও শিশু বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কলকাতা এবং এর আশপাশের জেলাগুলিতে সদ্যোজাত বিক্রির যে ঘটনাগুলি সামনে এসেছে, তার সঙ্গে মানিকের কোনো যোগ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
সিআইডি জানিয়েছে, এই চক্রের মূল হোতাদের ধরতে তারা আরও তথ্য সংগ্রহ করছে। সারোগেসি চক্র এবং আইভিএফ সেন্টারের মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। দোষীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সমাজের জন্য বিপদ
সারোগেসির মত একটি বৈধ পদ্ধতির অপব্যবহার করে এই ধরনের অপরাধ সমাজের নৈতিকতাকে আঘাত করছে। দুঃস্থ মহিলাদের ব্যবহার করে শিশু বিক্রির মতো কার্যকলাপ একদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, অন্যদিকে সমাজে বেআইনি কার্যকলাপের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
এই চক্রের উদ্ঘাটন শুধু অপরাধীদের শাস্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার নয়, বরং সারোগেসি প্রক্রিয়ার উপর আরও নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে।