শিশুর দোল আনন্দ যেন বিপদে না বদলায় !
দোল পূর্ণ আনন্দের উৎসব। রঙের ছোঁয়ায় ছোট-বড় সবাই মেতে ওঠে, বিশেষ করে শিশুরা। রং মাখানো, ছিটানো, দৌড়াদৌড়ি – এই সবকিছুই তাদের জন্য দোলের বিশেষ আকর্ষণ। তবে শিশুর কোমল ত্বক ও সংবেদনশীল শরীরের কথা মাথায় রেখে কিছু সতর্কতা রাখা জরুরি, যাতে আনন্দের মুহূর্ত কোনো দুর্ঘটনায় পরিণত না হয়। অভিভাবকরা যদি কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখেন, তাহলে দোলের উৎসব হবে নিরাপদ ও মজাদার।
১. রাসায়নিক রং এড়িয়ে চলুন
বাজারে যেসব রং পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই রাসায়নিক মিশ্রিত, যা শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অনেকে ভেষজ আবির বলে বিক্রি করলেও তাতেও রাসায়নিক থাকে। তাই নিজেদের তৈরি প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে শিশুদের গায়ে কম রং লাগানোর চেষ্টা করুন।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, “দুধের শিশুদের রং খেলানো একেবারেই উচিত নয়। পাঁচ থেকে দশ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তাদের ত্বক নরম ও সংবেদনশীল হওয়ায় রাসায়নিকযুক্ত রং থেকে অ্যালার্জি ও চর্মরোগ হতে পারে।”
২. পিচকারি ও বেলুন ব্যবহারে সতর্কতা
শিশুরা জল রং ভরা পিচকারি ও রং মেশানো বেলুন ছুড়তে ভালোবাসে। কিন্তু এটি অনেক সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে বেলুনের আঘাতে চোখ, নাক বা কানে গুরুতর চোট লাগতে পারে।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বেলুন খেলা পুরোপুরি এড়িয়ে চলা উচিত এবং পিচকারি ব্যবহারের সময় শিশুদের বোঝানো উচিত যেন তারা অন্যের মুখে বা চোখে সরাসরি রং না ছোড়ে।
৩. চোখের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন
দোলের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চোখ। রাসায়নিকযুক্ত রং চোখে গেলে তা রেটিনার মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ডা. প্রিয়ঙ্কর পাল বলেন, “জল রংয়ের চেয়ে আবির দিয়ে খেলা করা বেশি নিরাপদ। রাসায়নিক রং যদি চোখে ঢোকে, তাহলে চোখ কচলানো একেবারেই উচিত নয়। ঠান্ডা জল দিয়ে চোখ ধুয়ে দিন। সমস্যা না কমলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।”
৪. অ্যালার্জি থাকলে বাড়তি সতর্কতা নিন
শিশুর যদি ধুলো অ্যালার্জি, ঠান্ডা অ্যালার্জি বা হাঁপানি থাকে, তাহলে দোলের রং তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই অবস্থায় রাসায়নিক রং ব্যবহার একেবারেই না করাই ভালো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি শিশুর রং খেলার ইচ্ছে থাকে, তাহলে কম পরিমাণে বাড়িতে তৈরি ভেষজ আবির কপালে বা হাতে লাগিয়ে দিন, তবে পুরো শরীরে মাখানো উচিত নয়।
৫. অভিভাবকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
✔ শিশুকে ফুলহাতা জামা ও লম্বা প্যান্ট পরান, যাতে ত্বকের সংস্পর্শে রং কম আসে।
✔ রং মাখানোর আগে শিশুর ত্বকে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল লাগিয়ে দিন। এতে রং সহজে চামড়ায় বসবে না এবং সহজেই ধুয়ে যাবে।
✔ রং মুছতে বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। এতে শিশুর ত্বক শুষ্ক ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বরং মাইল্ড সাবান বা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
✔ রোদে বেশি সময় রং খেলতে দিলে শিশুর শরীর থেকে জলশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) তৈরি হতে পারে। তাই তাদের বারবার পানি, ফলের রস বা ডাবের পানি খাওয়ান।
✔ রং চোখে গেলে কখনোই হাত দিয়ে কচলানো যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যদি সমস্যা না কমে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
✔ খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। দোলের দিন অতিরিক্ত মিষ্টি বা তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেলে শিশুর হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো ভালো।
শেষ কথা
দোল হোলির রঙিন আনন্দে মাতার অধিকার সবার আছে, তবে নিরাপত্তা আগে। ছোটদের আনন্দ যেন কোনো বিপদের কারণ না হয়, সেটি নিশ্চিত করাই অভিভাবকদের দায়িত্ব। সঠিক প্রস্তুতি ও সাবধানতা অবলম্বন করলে শিশুদের জন্য দোল হবে নিরাপদ ও স্মরণীয় এক উৎসব।
২০২৭ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করলেন রোহিত, ফিটনেসে নজর দিচ্ছেন অভিষেক নায়ারের সাহায্যে