শীতের আগমন মানেই সর্দি-কাশি আর অ্যালার্জির সমস্যা। এই সময়ে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, বিশেষ করে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এক নতুন ধরনের নিউমোনিয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, যা ধীরে ধীরে শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’। এর প্রধান কারণ একটি বিশেষ ব্যাক্টেরিয়া, যার নাম ‘মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি’।
কী এই ‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’?
‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’ এক ধরনের সংক্রমণ, যা মূলত শ্বাসযন্ত্রে প্রভাব ফেলে। এটি সাধারণ নিউমোনিয়ার তুলনায় অপেক্ষাকৃত মৃদু হলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। চিনে গত বছর এ ধরনের নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। করোনার সময়ও এই ব্যাক্টেরিয়া অনেকের মধ্যে সংক্রমণ ঘটিয়েছিল। সাম্প্রতিক কালে ভারতে এর পুনরুত্থান লক্ষ করা যাচ্ছে।
উপসর্গগুলো কী রকম?
‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’-র উপসর্গ সাধারণ সর্দি-কাশি বা গলাব্যথার মতোই। কিন্তু রোগ বাড়লে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, দুর্বলতা এবং কাশির সঙ্গে কফ ওঠার সমস্যা। হাঁপানি বা সিওপিডি রোগীদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় না আনলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে।
কী ভাবে এই রোগ ছড়ায়?
‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এটি বাতাসে থাকা ধুলোবালি, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, লালা বা থুতুর মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক দুর্বল।
কী ভাবে সনাক্ত করা হয়?
উপসর্গ দেখে চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় করেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য এক্স-রে বা সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা করানো হয়। সঠিক সময়ে রোগ সনাক্ত হলে চিকিৎসা সহজ হয় এবং জটিলতা এড়ানো যায়।
প্রতিরোধের উপায়
১. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: শিশুদের নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
২. মাস্ক ব্যবহার: ধুলোবালি বা ঠান্ডা থেকে বাঁচতে বাইরে বের হওয়ার সময় শিশুদের মাস্ক পরানো জরুরি।
৩. জল পান: শিশুদের শরীর আর্দ্র রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ান।
৪. অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার: নিজে থেকে কোনও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না।
৫. অন্তর রাখা: নিউমোনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে শিশুদের দূরে রাখুন।
চিকিৎসা
‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’ সাধারণত খুব জটিল না হলেও, সময় মতো চিকিৎসা না হলে এটি মারাত্মক আকার নিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ ও অন্যান্য সেবন করলে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।
সচেতন থাকুন
শীতকালে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। একটু অসাবধানতাই বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। ‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’-র প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। সচেতনতা এবং সঠিক নিয়ম মেনে চললেই শিশুদের এই রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।