শিশিরে গলল ভারত!
রায়পুরের মাঠে ভারত করল ৩৫৮ রানের বিরাট স্কোর। বিরাট কোহলির টানা দ্বিতীয় শতরান এবং রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের দুর্দান্ত আক্রমণী ইনিংস ভরসা জুগিয়েছিল। কিন্তু অজেয় শুরুকে ম্লান করে দিল শিশির, ব্যাটারদের বেপরোয়া মার, এবং সবচেয়ে বড়—দলের কৌশলগত ভুল। দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৫৯ রানের পাহাড় তাড়া করে ৪ উইকেটে জয় তুলে নিল। ফলে সিরিজ এখন ১-১, শনিবার বিশাখাপত্তনমে ‘ফাইনাল-সম’ ম্যাচে নামছে ভারত।
রেকর্ড রান, তবু আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না রুতুরাজ
ইনিংস বিরতির সময়ই রুতুরাজ বলে দিয়েছিলেন—প্রচুর শিশির পড়বে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। ব্যাট যেন ভিজে রাবারের বল মারছিল। পেসার-স্পিনার কারও হাতেই গ্রিপ থাকল না। যে রান ৩৫০+ দেখে অপ্রতিরোধ্য মনে হয়েছিল, শিশিরে তা পরিণত হল খুব সহজ টার্গেটে।
গম্ভীরের কৌশলগত ভুলে রানচাকা থমকাল
বিশেষজ্ঞেরা বরাবরই বলেছেন—ভারতের ছ’নম্বরে জাডেজাই সঠিক পছন্দ। কিন্তু গৌতম গম্ভীর বারবার ওয়াশিংটন সুন্দরকে সেই জায়গায় পাঠাচ্ছেন। রুতুরাজ–কোহলির জুটির পরে ভারতের রানরেট হঠাৎ কমে যায়। ওয়াশিংটনের ধীর ব্যাটিং দলের ছন্দ নষ্ট করে। তার পরিণতিতে ৩৮০ হওয়া উচিত ইনিংস থেমে যায় ৩৫৮-এ।
মাত্র ৮ বলে ১ রান করে তিনি রান–আউটও হন অত্যন্ত অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে। এই ২০–২৫ রানের ঘাটতিই শেষ পর্যন্ত হারের কারণ বলে মনে করছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা।
জোড়া শতরানে কোহলি–রুতুরাজ
রাঁচীর শতরানের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন কোহলি। শুরুটা ছিল ছক্কায়, কিন্তু পরে বুদ্ধিদীপ্ত সিঙ্গেল-ডবলেই ইনিংস গড়েছেন। কিছু ভুল শট খেললেও দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডিংয়ের ত্রুটিতে বাঁচেন। শেষ পর্যন্ত ৯৩ বলে ১০২ রান।
রুতুরাজের শতরান ছিল আরও দ্রুত—৮৩ বলে ১০৫। মিডল অর্ডারে সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন তিনি। দু’জনের জুটি—১৫৬ বলে ১৯৫ রান—ছিল ম্যাচের সেরা অংশ।
খারাপ ফিল্ডিংয়ে ৩০ রান গলল
শুধু বোলিং বা শিশির নয়; ম্যাচ হারার বড় কারণ ভারতের অস্বাভাবিক খারাপ ফিল্ডিং।
- যশস্বীর সহজ ক্যাচ ফস্কানো,
- জাডেজার হাত ফস্কে চার যাওয়া,
- কুলদীপের পায়ের নিচ দিয়ে বল বেরিয়ে যাওয়া,
- অযথা ওভারথ্রো—
সব মিলিয়ে কমপক্ষে ২৫–৩০ রান গলেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ফিল্ডিং ক্ষমাহীন।
মার্করাম–বাভুমার দৃঢ় জুটি
অর্শদীপ শুরুতেই ডি’কককে ফিরিয়ে চাপ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু মার্করাম (১০০+) ও বাভুমা খেলা ধরে নেন। যশস্বীর ফস্কানো ক্যাচে বেঁচে যান মার্করাম—সেখান থেকেই ভারত বিপদে।
বাভুমা ধীরে শুরু করলেও পরে গতি বাড়িয়ে আউট হওয়ার আগে করেছেন ৪৬ রান।
ব্রিৎজকে ও ব্রেভিস—দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন ভরসা
ম্যাথু ব্রিৎজকে আবারও দেখালেন তাঁর ধৈর্যশীল ব্যাটিং। ৬৪ বলে ৬৮ রান করে ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে এগিয়ে দিলেন। অন্যদিকে ‘বেবি এবি’ খ্যাত ব্রেভিস মারলেন ৩৩ বলে ৫ ছক্কাসহ ৫০+, ভারতীয় বোলিং ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর আগ্রাসনে।
প্রসিদ্ধ—সবচেয়ে হতাশার জায়গা
যেখানে অর্শদীপ–হর্ষিত লড়াই করেছেন, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ তাতে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। শিশিরে বৈচিত্র ব্যবহার তো দূরের কথা—একঘেয়ে লেংথে বল করে গিয়েছেন। ৮.২ ওভারে ৮৫ রান দিয়ে ম্যাচ ভারতের হাত থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনিই।

