আরজি কর মামলার রায় ঘোষণার আগে কড়া ব্যবস্থা
আজ শনিবার সকাল থেকেই শিয়ালদহ আদালত চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুন মামলার রায় ঘোষণা হতে চলেছে আজ। এই কারণেই আদালত চত্বরে প্রবেশের মুখ থেকে একাধিক জায়গায় ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। মামলার গুরুত্ব এবং মানুষের সম্ভাব্য ভিড় সামাল দিতে আগেভাগেই নেওয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ।
রায় ঘোষণা: ঐতিহাসিক মুহূর্তের অপেক্ষা
গত বছরের ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের চতুর্থ তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের নিথর দেহ। এই মর্মান্তিক ঘটনায় সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা কলকাতা। ঘটনার তদন্তে উঠে আসে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম, যাকে সিসিটিভি ফুটেজেও স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। প্রথমে কলকাতা পুলিশের হাতে থাকা তদন্ত পরে সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তরিত হয়।
আজ, পাঁচ মাসের টানা বিচারপর্বের পর, শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ এজলাস বসার কথা। ঘটনাস্থলে অভিযুক্তকে নিয়ে আসা হবে, এবং তখন আদালত চত্বরে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে
কেন বাড়ানো হলো নিরাপত্তা?
আদালত চত্বরে ইতিমধ্যেই মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছে। ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় এবং রায় ঘোষণার সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কলকাতা পুলিশ সকাল থেকেই বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছে। আদালতের প্রবেশদ্বারে কড়া তল্লাশি চালানো হচ্ছে, এবং সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত এবং তার দাবি
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার বর্তমানে প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন। চার্জশিটে সিবিআই তাঁকে একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং আদালতে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানিয়েছে।
তবে বিচারপর্ব চলাকালীন, অভিযুক্ত প্রিজন ভ্যানে থাকা অবস্থায় বারবার চিৎকার করে দাবি করেছেন, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং তাঁকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্য
নির্যাতিতার পরিবার সিবিআইয়ের দাবিকে মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, এই ভয়াবহ কাণ্ড একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। তাঁরা আদালতে আরও বিস্তারিত এবং নিখুঁত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকতে পারে, যা এখনও সঠিকভাবে প্রকাশ পায়নি।
মামলার প্রেক্ষাপট
গত ১১ নভেম্বর থেকে এই মামলার বিচারপর্ব শুরু হয়। বিচারক অনির্বাণ দাসের অধীনে রুদ্ধদ্বার কক্ষে টানা বিচারপ্রক্রিয়া চলে। আজ শিয়ালদহ আদালতের তিনতলার ২১০ নম্বর ঘরে বিচারক দাসের এজলাস বসার কথা।
অভিযুক্তকে সেদিনই সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে নির্যাতিতার পরিবারের সন্দেহ, এই মামলায় আরও কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।
রায় ঘোষণার গুরুত্ব
আজকের দিনটি শুধু আইনি প্রক্রিয়ার অংশ নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই মামলার রায় নির্ধারণ করবে একজন নিরীহ চিকিৎসকের হত্যার বিচারের চূড়ান্ত দিক। সিভিক ভলান্টিয়ারের শাস্তি কি হবে, তা নিয়ে এখন সবার নজর শিয়ালদহ আদালতের দিকে।
কলকাতা পুলিশ এবং সিবিআই যে চাপের মুখে এই মামলার তদন্ত করেছে, তা আজকের রায়ের মাধ্যমেই তার সাফল্য বা ব্যর্থতার পরিচয় দেবে। অপরাধের ন্যায়বিচার যে কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি প্রধান স্তম্ভ, এবং আজকের দিন সেই সত্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে, আজকের রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি মর্মান্তিক ঘটনার বিচারপর্ব সমাপ্তি পাবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া হওয়ায়, সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসার পাশাপাশি এই ঘটনা ভবিষ্যতে আরও সচেতনতা ছড়াতে সাহায্য করবে।