শাহরুখ খান
শাহরুখ খান, বলিউডের বাদশা, যখনই বড়ো পর্দায় উপস্থিত হন, একের পর এক ছবি বক্স অফিসে রাজত্ব করে চলে। তার জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি, দেশ-বিদেশে যেখানেই যায়, সেখানেই ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই সব কিছুর মাঝেও একটা বিষয় বেশ লক্ষ্যণীয়। তিনি আর কখনোই সংবাদমাধ্যমের সামনে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। এমনকি, তার ছবির মুক্তির পরেও, যখন অনেক বড়ো সাক্ষাৎকার সেশন আয়োজন করা হয়, সেখানে সুধীজনদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি একটিও প্রশ্নের উত্তর দেন না তিনি। আসলে, কি কারণে এত বছর ধরে শাহরুখ খান মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছেন? কেন তিনি আর সংবাদমাধ্যমের সামনে আসতে চান না?
এই গল্পের শুরু ২০২১ সালে। একটি ঘটনাই ছিল যার কারণে শাহরুখ খান সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে, শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান খানকে মাদক মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটি ঘটে মুম্বইয়ের একটি ক্রুজ পার্টির সময়, যেখানে আরিয়ান খানকে মাদক গ্রহণের অভিযোগে আটক করা হয়। পরে অবশ্য সেই মামলায় আদালত আরিয়ান খানকে নির্দোষ প্রমাণিত করে মুক্তি দেয়। কিন্তু এর আগেই, এই মামলার প্রভাব ছিল বিশাল। দেশের সমস্ত সংবাদমাধ্যম একযোগে এই ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে শুরু করে, আর প্রতিটি সংবাদ চ্যানেলে শুধু এই মামলাকে ঘিরেই আলোচনা চলছিল।
এই সময়েই শাহরুখ খান সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। বহু সাংবাদিক প্রত্যাশা করেছিলেন, তিনি কিছু বলবেন, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন, তবে শাহরুখ খান তা করেননি। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যখন আদালতে বা পুলিশ স্টেশনে দাঁড়িয়ে, তার পুত্রের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছিলেন, তখনও শাহরুখ খান অত্যন্ত সযত্নে সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে ছিলেন। তিনি একবারও কোনও বক্তব্য দেননি বা কোনও সাক্ষাৎকারও দেননি। শোনা যায়, সে সময়ই অভিনেতা একটা সিদ্ধান্ত নেন— সে সিদ্ধান্ত ছিল, নিজের পরিবারকে ঘিরে রাখার এবং মিডিয়ার চাপ থেকে মুক্ত থাকার।
এদিকে, সম্প্রতি একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে যা আবারও শাহরুখ খানের এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণগুলো স্পষ্ট করে। বলিউডের জনপ্রিয় সাংবাদিক ও ইউটিউবার ভারিন্দর চাওলা, এক সময় শাহরুখ খানের কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্ত শুটিং করেছিলেন। শাহরুখ খান পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে খুবই ভালোবাসেন, এবং সেই মুহূর্তগুলো একেবারে পরিবারের ব্যক্তিগত ছিল। কিন্তু যখনই তিনি জানতে পারেন যে ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে, তখনই শাহরুখের টিম কঠোর আপত্তি জানায়। ভারিন্দর চাওলা সেই ভিডিওটি মুছে ফেলেন এবং তার টিমকেও এই বিষয়ে জানিয়ে দেন। এরপর, শাহরুখ খান নিজে ফোন করেন ভারিন্দর চাওলাকে। তিনি তাকে জানান, এমন নয় যে তিনি সংবাদমাধ্যমের প্রতি কোনো দুর্বলতা বা বিরাগ প্রকাশ করছেন। কিন্তু, যে যন্ত্রণাটা তিনি এবং তার পরিবার পেয়েছেন, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তার ছেলে যখন গ্রেফতার হয়, সংবাদমাধ্যমের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তার ব্যক্তিগত জীবন, তার পরিবার, সবকিছুই যে ভাবে হালকা হয়ে উঠেছিল, তা তাকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছে।
শাহরুখ খানের কথায়, “আমি একজন বাবা, আর একজন বাবা হিসেবে এই ধরনের পরিস্থিতি কাউকে সহ্য করতে হয় না। আমি যদি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হই, তাহলে তারা আমাদের যন্ত্রণা আরো বাড়াবে। তাই আমি এড়িয়ে চলি।” এই ধরনের মনোভাবের কারণে শাহরুখ খান এখন আর প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে আসেন না এবং নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন না।
এমনকি, তিনি ও তার টিম তার ব্যক্তিগত সময়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন, যা তাঁকে এবং তার পরিবারকে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, তার ছেলের গ্রেফতার হওয়া পর থেকে শাহরুখ খান মিডিয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন এবং তার সিদ্ধান্তকে আরেকটু সোজা করে বললে, “যতটা সম্ভব মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়।”
শাহরুখ খান যদি নিজের পছন্দমতো মিডিয়া থেকে দূরে থাকতে চান, সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত অধিকার। বলিউডের এক অন্যতম বড়ো অভিনেতা হয়ে, তিনি যেভাবে জীবনযাপন করছেন, তাতে তার পরিবার ও মানসিক শান্তি যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।