শান্তির পথে মুর্শিদাবাদ
গত কিছু দিনের হিংসা ও আতঙ্কে মুর্শিদাবাদের একাধিক পরিবার ভিটে-মাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। কেউ আশ্রয় নিয়েছিল ঝাড়খণ্ডে, কেউ বা মালদহে আত্মীয়ের বাড়িতে। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। পুলিশের কড়া টহলদারি, বিএসএফের নিয়মিত নজরদারি ও স্থানীয়দের সঙ্গে সরাসরি কথাবার্তার জেরে আবার ঘরে ফিরছেন আতঙ্কিত মানুষজন।
মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মতো মানুষ নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। শুধু এ দিনই অন্তত ৭২ জনের ফেরার খবর মিলেছে। রবিবার ১৯ জন, সোমবার ৪৯ জন— প্রশাসনের সহযোগিতায় ধাপে ধাপে ফিরছেন তারা। জেলা প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে এই প্রত্যাবর্তন কার্যক্রম চলছে। পুলিশের দাবি, ঘরছাড়াদের মোট সংখ্যা আনুমানিক ৫০০ হলেও, স্থানীয়দের মতে সংখ্যাটা হাজার ছাড়িয়েছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের আশ্বাস
বাড়ি ফেরা মানুষদের মুখে এখনও ভয়-উদ্বেগ স্পষ্ট। তবে প্রশাসনের ভরসা-দেওয়া আশ্বাস অনেকের মনেই সাহস জোগাচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, “আমরা পাশে আছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রতিটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে রিলিফ কিট, চালু রয়েছে কমিউনিটি কিচেন।” জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায়ও আশ্বস্ত করেছেন, “এলাকায় সম্পূর্ণ শান্তি ফিরে এসেছে, এখন ঘরে না ফেরার কোনও কারণ নেই।”
অভিযুক্তদের ধরপাকড় জারি
যারা অশান্তি ছড়িয়েছে, তাদেরও ছেড়ে কথা বলছে না প্রশাসন। ইতিমধ্যে মঙ্গলবারই সামশেরগঞ্জের জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হিংসায় জড়িত বা হুমকি দেওয়া এমন ২০ জনকে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে নজরদারি। রাজ্য পুলিশের এডিজি সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, প্ররোচনামূলক পোস্টের দায়ে ১০৯৩টি অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যেই ব্লক করা হয়েছে।
শান্তি ফেরাতে নতুন উদ্যোগ
অশান্তি এড়াতে প্রতিটি বুথ স্তরে তৈরি করা হয়েছে শান্তি কমিটি। এখানে রয়েছেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছে এই কমিটি। খবর পেলেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে। ধুলিয়ানের বিড়ি মহল্লায় আবার চালু হয়েছে কাজ। বাংলা নববর্ষে খুলেছে মিষ্টির দোকানও— যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মমতার বার্তা এবং সুপ্রিম কোর্টের শুনানি
এদিকে, ওয়াকফ সংশোধনী আইন ঘিরে উত্তেজনার আবহে বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই আইনের বিরুদ্ধে একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, এই আইন বাংলায় কার্যকর হবে না। একই দিনে সুপ্রিম কোর্টেও এই আইন নিয়ে শুনানি রয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্য সরকার এবং আদালত— উভয় দিক থেকেই চলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা।
শেষ কথা
মুর্শিদাবাদে আবার ফিরছে স্বস্তির হাওয়া। প্রশাসনের কড়া নজরদারি, দ্রুত পদক্ষেপ এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় এক অনভিপ্রেত অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে গোটা অঞ্চল। এখন শুধু দরকার, সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় সেই শান্তির পরিবেশ ধরে রাখা।
মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ