শান্তিচুক্তির পথে রাশিয়া!
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে টানা সাড়ে তিন বছর। এই দীর্ঘ সংঘাতের অবসান ঘটাতে এবার শর্তসাপেক্ষে শান্তিচুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক মহলের নজর কেড়েছে সেই প্রস্তাব, কারণ আলাস্কায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে সরাসরি এই বিষয়টি তুলেছেন পুতিন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার শান্তিচুক্তির জন্য তিনটি মূল দাবি রয়েছে। প্রথমত, ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চলের ডনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান রাশিয়া কোনওভাবেই মেনে নেবে না। তৃতীয়ত, ইউক্রেনের মাটিতে পশ্চিমা বিশ্বের—অর্থাৎ ইউরোপ বা আমেরিকার—কোনও সেনা মোতায়েন করা যাবে না।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই তিনটি শর্ত পূরণ হলে রাশিয়া কেবল যুদ্ধ থামাতেই রাজি নয়, বরং ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ফেরত দিতেও প্রস্তুত। বিশেষত দক্ষিণ ইউক্রেনের জ়াপোরিজিয়া এবং খেরসন অঞ্চলের কিছু অংশ ফেরানোর প্রতিশ্রুতিও নাকি দিয়েছে মস্কো। বর্তমানে ওই দুই অঞ্চলের প্রায় ৭৩ শতাংশ রুশ সেনাদের দখলে রয়েছে।
আলাস্কায় বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাম্প ও পুতিন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার আলোচনার পর পুতিন জানিয়েছেন, এই আলোচনাই হয়তো শান্তির পথে নতুন দরজা খুলে দিতে পারে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে শর্তগুলি প্রকাশ করেননি দুই নেতা। ট্রাম্পও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু জানাননি। তবুও আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তৈরি করেছে পুতিনের এই প্রস্তাব।
উল্লেখযোগ্য, মার্কিন হিসাব অনুযায়ী রাশিয়া ইতিমধ্যেই ডনবাস অঞ্চলের প্রায় ৮৮ শতাংশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুতিন চান বাকি অংশও ইউক্রেন ছেড়ে দিক। ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি বরাবরই রাশিয়ার কাছে নিরাপত্তাজনিত হুমকি হিসাবে দেখা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট। একইসঙ্গে পশ্চিমা সেনা ইউক্রেনে প্রবেশ করলে রাশিয়া শান্তিচুক্তি ভেঙে ফেলবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে মস্কো।
এর আগে একাধিক সূত্রে জানা গিয়েছিল, ট্রাম্পও ডনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে। তবে সম্প্রতি কিয়েভ সফরে গিয়ে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় তিনি এই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প বারবার বলেছেন যে, তিনি যুদ্ধ শেষ করতে চান। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর থেকে তাঁর মুখে ‘যুদ্ধবিরতি’ নয়, বরং ‘শান্তিচুক্তি’-র শব্দটাই বেশি শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, ইউক্রেন বারবার জানিয়েছে—কোনও পরিস্থিতিতেই তারা নিজের ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেবে না। জ়েলেনস্কি এর আগেই বলেছিলেন, পুতিনের শর্ত আসলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নতুন কৌশল। ইউরোপের দেশগুলিও একই সুরে প্রশ্ন তুলছে—রাশিয়া আদৌ শান্তি চাইছে, নাকি কৌশলে সময় কিনছে।
পুতিনের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, তিনি জ়েলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে মস্কোর প্রশ্ন, জ়েলেনস্কি কি আদৌ বৈধ রাষ্ট্রপ্রধান? কারণ ২০২৪ সালে তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষ হলেও যুদ্ধের কারণে নতুন নির্বাচন হয়নি। ফলে ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্ট এই চুক্তি মানবেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
সব মিলিয়ে, রাশিয়ার শর্তে শান্তিচুক্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ। যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী অধ্যায় শেষ হবে কি না, তা নির্ভর করছে জ়েলেনস্কি ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের উপর।
জমি কেনার নামে শত কোটির সম্পত্তি দখলের চেষ্টা? বাঁকে বিহারী মন্দিরকে ঘিরে উত্তাপ

