শাড়িতে দুই বাংলার ইতিহাস!
বাংলার বুনন শিল্প, বিশেষ করে শাড়ির শিল্প, ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে এসেছে। শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়, বরং এটি বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ব্যবসার ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি, কলকাতার ‘উইভার্স স্টুডিয়ো’-তে একটি বিশেষ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, যা বাংলার শাড়ি এবং বুনন শিল্পের চার শতকের ইতিহাস তুলে ধরছে। এই প্রদর্শনীটি বাংলার ঐতিহাসিক শিল্পচর্চার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন উপাদান এবং প্রভাবকে সবার সামনে নিয়ে এসেছে।
এ অঞ্চলের বুনন শিল্পের ইতিহাস, বিশেষত শাড়ির ইতিহাস, যে শুধুমাত্র শিল্পের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক ধারাবাহিকতারও প্রতীক। এই প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে বালুচরি, জামদানি, বেনারসি, মুর্শিদাবাদ সিল্ক সহ নানা ধরনের শাড়ির ইতিহাস। এখানে শুধু শাড়ির নকশা বা রঙের পরিবর্তনই নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বাণিজ্যিক প্রেক্ষাপটও বিস্তারিতভাবে চিত্রিত হয়েছে। দর্শন শাহ, ‘উইভার্স স্টুডিয়ো’-র উদ্যোক্তা, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন এবং এর মাধ্যমে তিনি বাংলার বুনন শিল্পের বৈশ্বিক প্রভাব তুলে ধরেছেন।
শাড়ির সঙ্গে জড়িত ইতিহাস কেবল ঐতিহ্য নয়, বরং বাণিজ্যিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক মিশ্রণ এবং সাংস্কৃতিক সৃষ্টির নিদর্শনও। পর্তুগিজ, আরব, চিনা, এবং অন্যান্য বিভিন্ন সংস্কৃতির উপস্থিতি বাংলায় শাড়ি শিল্পে প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসার জন্য এই অঞ্চলে আগত বিভিন্ন জাতি ও জনগণের মাঝে এক সাংস্কৃতিক মিলনমেলা হয়েছিল, যা শেষপর্যন্ত শাড়ির নকশা, সূতোর কাজ এবং বুননে প্রতিফলিত হয়েছে।
এই প্রদর্শনীর মধ্যে এক বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণকারী বিষয় হল জামদানি শাড়ির বিবর্তন এবং কাঁথার কাজের ইতিহাস। ১৭ শতকের গোড়ায় পর্তুগিজদের হাত ধরে বাংলার কাপড়ের রফতানি বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছিল। প্রদর্শনীতে ধরা হয়েছে কীভাবে বাংলার শাড়ি এবং কাপড় আরব, ইন্দোনেশিয়া সহ নানা দেশের সংস্কৃতিতে প্রবাহিত হয়েছিল। ১৯ শতকের কাঁথার কাজের বিবর্তন, জামদানির সূতোর টান, এবং বালুচরি রেশমের প্রভাব—এসব একে একে চিত্রিত হয়েছে।
শুধু রফতানি নয়, বাংলায় আমদানির প্রভাবও এখানে ফুটে উঠেছে। বহু দূরদেশের ব্যবসায়ী এবং তাদের সঙ্গে আসা গল্প ও সংস্কৃতির ধারাগুলি শাড়ির নকশায় বোনা হয়েছে। বিশেষ করে নীল চাষের ইতিহাস এবং ইন্ডিগো রঙের ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলার কাপড়ের ইতিহাসের এক নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে।
এই প্রদর্শনী শুধু বাংলার শাড়ি শিল্পকে ইতিহাসের পটে জীবন্ত করে তুলেছে, তা নয়, বরং এটি দর্শকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। সেখানকার শাড়ির মধ্যে ইতিহাস, বাণিজ্য, এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন স্পষ্টভাবে দেখা যায়। প্রদর্শনীটি ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এবং এটি কলকাতার এক অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রদর্শনী হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।
দর্শন শাহ-এর এই প্রচেষ্টা শাড়ির শিল্পের এক নতুন দৃষ্টিকোণ দেখিয়েছে, যা একদিকে যেমন ঐতিহাসিক, অন্যদিকে শিল্পপ্রেমীদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করছে।
মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?