নিকোল কিডম্যান
শরীরী আবেদন, অভিনয় ক্ষমতা এবং পর্দায় তার উপস্থিতি— এই সব কিছু নিয়েই একসময় ভাবনা ছিল, বয়স বাড়লে কি এসবের গুরুত্ব কমে যায়? কিন্তু হালফিলে হলিউড অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান সেটি একেবারেই মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছেন। ৫৭ বছর বয়সেও তিনি অটুট, নতুন নতুন কাজের জন্য নিজের আগ্রহ, দক্ষতা এবং অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে চলেছেন।
নিকোল কিডম্যানের পঞ্চাশ পেরোনোর পরও তিনি যে তাঁর আবেদন ও অভিনয় ক্ষমতায় কোনো ভাটা পড়েননি, তার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ের কাজগুলোতে। তাঁর নতুন সিনেমা ‘বেবিগার্ল’-এর চরিত্রে ৫৭ বছর বয়সী নিকোল যেভাবে নিজের শারীরিক এবং মানসিক দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন, তা নিশ্চিতভাবে তরুণদের জন্য একটি আদর্শ। সিনেমায় হাতে অল্পবয়সী ইন্টার্নের টাই নিয়ে যে দৃশ্যটি তিনি তৈরি করেছেন, তা দেখে মনে হবে যেন ২৭ বছরের যুবতী।
নিকোল কিডম্যান শুধুমাত্র তার অভিনয় দক্ষতায়ই নিজেকে প্রতিস্থাপন করেননি, বরং সারা বছর নানা প্রকল্পে কাজ করে গেছেন। হলিউডের এক খ্যাতনামা অভিনেতা স্টিভ মার্টিন বলেছেন, “মাঝেমধ্যে আমি বলি, নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে আপনার দৃশ্য ছিল একেবারে নিখুঁত! দশের মধ্যে নয় বার সেই সঠিক মুহূর্তগুলো চলে আসে।”
অবশ্য, নিকোল কিডম্যানের অভিনয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল চরিত্র বাছাইয়ের প্রতি তার আগ্রহ। ‘বেবিগার্ল’-এর ক্ষেত্রে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল ছবির শিরোনাম। নিকোল একবারও সেলিব্রিটির মর্যাদায় অভ্যস্ত হয়ে কাজের প্রতি উদাসীন হননি, বরং একের পর এক অভিনয় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। চরিত্র নির্বাচন এবং নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে তার যে নিষ্ঠা ও আগ্রহ, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
নিকোল কিডম্যানের কাছে শুধুমাত্র পুরস্কারের প্রতি আকর্ষণ ছিল না। অস্কার, এমি, গোল্ডেন গ্লোবের মতো একাধিক পুরস্কারে ভরপুর হলেও তার মধ্যে একটানা সাফল্যের প্রতি ক্ষুধা কমেনি। ২০১৭ সালে নিকোল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি প্রতি বছর অন্তত একবার মহিলা পরিচালকের সঙ্গে কাজ করবেন। এবং এটি শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি ছিল না, তিনি বাস্তবেও তার লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে গেছেন। পরিচালক হালিনা রাইনের ‘ইনস্টিংক্ট’ ছবির পর তিনি নিজের কাজের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। প্রথমে রাইন বিশ্বাসই করতে পারেননি, কিন্তু নিকোলের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এবং তার খ্যাতি দেখে তিনি বিস্মিত হন।
নিকোল কিডম্যানের জন্য শুধু অভিনয় নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতাও কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। যেমন, ‘এক্সপ্যাটস’ সিরিজে তিনি এক ধনী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যেখানে একটি বিশেষ দৃশ্যে, মৃতদেহ দেখে তার অট্টহাসি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো। এই দৃশ্যটি তার জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত, যা দর্শকদের জন্য এক বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি করে।
নিকোলের প্রভাব শুধু সিনেমা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। তার অভিনীত বিজ্ঞাপনগুলো এখনো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। একবার তার মুখে বলা “উই কাম টু দিস প্লেস ফর ম্যাজিক” বাক্যটি দর্শকদের মনের গভীরে গেঁথে গেছে।
আজও তার প্রতি দর্শকদের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, এবং তার কাজ নিয়ে সার্চ করার প্রবণতা প্রায় ৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫৭ বছর বয়সেও নিকোল কিডম্যান তার শক্তিশালী অভিনয়শৈলী দিয়ে প্রমাণ করেছেন, বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা। তাঁর বার্তা আজও তরুণদের জন্য প্রেরণা— “ভয় পেও না। থেমে যেও না। শুধু কাজ করে যাও।”