Wednesday, May 28, 2025

শতাব্দীর পর শতাব্দী বদলেছে রূপ, শেষমেশ ওয়াকফের আওতায় তুরস্কের ঐতিহ্য হাইয়া সোফিয়া!

Share

শতাব্দীর পর শতাব্দী বদলেছে রূপ-ওয়াকফের !

তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে অবস্থিত হাইয়া সোফিয়া—একটা নাম, যার ভেতর লুকিয়ে আছে শতাব্দী জুড়ে গড়ে ওঠা ধর্মীয়, রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অসাধারণ কাহিনি। এক সময় গির্জা, পরে মসজিদ, তারপর জাদুঘর—এবং সবশেষে আবার মসজিদ। কিন্তু এবার এর আইনি মালিকানা চলে গেল তুরস্কের ওয়াকফ বোর্ডের হাতে।

প্রশ্ন উঠেছে, এই ঐতিহাসিক স্থান কীভাবে ওয়াকফ সম্পত্তিতে পরিণত হলো? এর পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস এবং নানা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

অতীতের ধারায় হাইয়া সোফিয়ার রূপান্তর

এই স্থানের ইতিহাস শুরু হয়েছিল প্রাচীন গ্রিক-রোমান যুগে, যখন এখানে ছিল একটি মন্দির। পরে ৩৬০ খ্রিস্টাব্দে সেখানে তৈরি হয় খ্রিস্টান গির্জা ম্যাগনা এক্লেসিয়া। এরপর একাধিকবার ধ্বংস ও পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ শতকে বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান নতুনভাবে গির্জাটি নির্মাণ করেন। এর স্থাপত্য এবং গম্বুজ ছিল এতটাই আকর্ষণীয় যে বহু যুগ পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের অন্যতম চমকপ্রদ স্থাপত্য নিদর্শন।

অটোমান শাসনে মসজিদে রূপান্তর

১৪৫৩ সালে অটোমান সম্রাট সুলতান মেহমেদ দ্য কনকারার কনস্টান্টিনোপল দখল করলে, তিনি হাইয়া সোফিয়াকে একটি মসজিদে রূপান্তর করেন। শুধু তাই নয়, এই মসজিদ এবং তার জমি এক ওয়াকফ দলিলের মাধ্যমে দান করে দেন। সেই দলিলেই এই ধর্মীয় স্থানটির প্রথম ওয়াকফ সম্পত্তিতে পরিণত হওয়ার ভিত্তি তৈরি হয়।

আতাতুর্কের যুগে জাদুঘর

তুরস্কের আধুনিক স্থপতি মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৪ সালে এক সরকারি আদেশে হাইয়া সোফিয়াকে মসজিদ থেকে জাদুঘরে রূপান্তর করেন। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন।

এর্ডোগানের অধীনে ফের মসজিদ ও ওয়াকফে অন্তর্ভুক্তি

২০২০ সালে তুরস্কের শীর্ষ আদালত পূর্বের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে জানায়, হাইয়া সোফিয়া ওয়াকফ সম্পত্তি, একে অন্য কিছুতে রূপান্তর করা যায় না। এরপর প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোগান নতুন ডিক্রি জারি করে হাইয়া সোফিয়াকে আবার মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে তা ওয়াকফের অধীনে দিয়ে দেন।

এই সিদ্ধান্তকে কেউ দেখছেন ঐতিহ্য রক্ষার দিক থেকে, কেউ আবার বলছেন এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর কৌশল।

এখন কী অবস্থা?

বর্তমানে হাইয়া সোফিয়া আবার মসজিদ হলেও, এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান। তাই পর্যটকরা আগের মতোই এটি ঘুরে দেখতে পারেন, বিনা টিকিটে। শুধু নামাজের সময় ধর্মীয় আচরণের প্রতি সম্মান রেখে চলাফেরা করতে হয়।

হাইয়া সোফিয়ার এই রূপান্তর শুধু স্থাপত্যের নয়, বরং এটি ইতিহাস, রাজনীতি ও ধর্মের টানাপড়েনের একটি জীবন্ত দলিল—যার প্রতিটি ইট যেন বলে দেয় সময়ের গল্প।

স্ট্রেস কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে মাসাজ, তবে সাবধানে নিতে হবে এই সিদ্ধান্ত

Read more

Local News