লেডি কিলার ট্রাম্পের
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গড়লেন একাধিক ইতিহাস। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করছেন তিনি। এই জয় মার্কিন রাজনীতিতে বিরল কিছু কীর্তি সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে অন্যতম ১৩২ বছর পুরনো গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের রেকর্ড স্পর্শ করা। ক্লিভল্যান্ডের মতোই প্রথমবারের পর তিনি জনপ্রিয়তা হারিয়ে নির্বাচনে পরাজিত হলেও দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হলেন।
প্রথমবার ২০১৬ সালে ট্রাম্প নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট হিসেবে, সেই সময়ে হিলারি ক্লিন্টনের মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। কিন্তু চার বছরের মেয়াদে নানা বিতর্ক ও ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হওয়ায় জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে তাঁর। ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন তিনি, তবে রাজনীতি ছাড়েননি। বাইডেন প্রশাসনের নানান সিদ্ধান্ত নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন এবং বিরোধীদের ওপর লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যান, যা তাঁকে ২০২৪ সালে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে নিয়ে আসে। এবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে নেমে প্রথম থেকেই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ট্রাম্প।
জোড়া ইমপিচমেন্ট সত্ত্বেও সফল প্রত্যাবর্তন
ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনে দু’বার ইমপিচমেন্টের নজির রয়েছে, যা মার্কিন ইতিহাসে প্রথম। ২০১৯ সালে প্রথমবার তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার উদ্দেশ্যে সাহায্য চাওয়ার অভিযোগে ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হন। তখন অভিযোগ ওঠে, ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আমেরিকার অর্থ সাহায্য আটকে দিয়েছিলেন তিনি। আবার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে তাঁর সমর্থকদের হিংসাত্মক কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয়বার ইমপিচমেন্টের সম্মুখীন হন ট্রাম্প। তবে প্রতিবারই কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সেনেটে তিনি বেকসুর খালাস পান।
‘লেডি কিলার’ ট্রাম্পের বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই
২০২৪ সালে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করা হলেও ফলাফল অন্য কথা বলেছে। সাতটি সুইং স্টেটে জয়ী হয়ে ট্রাম্প অভাবনীয় ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছেন। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের আগের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীও মহিলা— হিলারি ক্লিন্টন ও কমলা হ্যারিস। এই প্রেক্ষিতে তাঁকে ‘লেডি কিলার’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বিতর্কের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা
পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক ট্রাম্পের রাজনীতিতে প্রভাব ফেললেও তা তাঁর সমর্থকদের ওপর সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। অভিযোগ ওঠে, ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগে স্টর্মিকে মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার প্রদান করেন। এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক আদালতে মামলা দায়ের হয় এবং এই বছরেই তাঁকে তথ্য গোপন করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি অভিযোগ প্রমাণিত করে। যদিও রিপাবলিকান শিবির থেকে দাবি তোলা হয় যে, এই অভিযোগ রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ।
মার্কিন রাজনীতিতে বিরল প্রত্যাবর্তন
১৩২ বছর পর গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের মতো ট্রাম্পও একবার পরাজিত হওয়ার পর ফের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নজির গড়লেন। ক্লিভল্যান্ডও তাঁর প্রথম মেয়াদের পর হারিয়ে পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছিলেন এবং জয়ী হয়েছিলেন। এই বিরল কৃতিত্ব অর্জনের মাধ্যমে ট্রাম্প মার্কিন ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই জয় শুধুমাত্র তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতাকেই নয়, বরং আমেরিকার রাজনৈতিক পটভূমির এক বিশেষ পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেয়।